বুধবার (২ মে) সকালে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা করাতে এসেছেন ময়মনসিংহের ভালুকার আবু সিদ্দিক (৫৫)।
কিন্তু শবে বরাতের বন্ধের কারণে চিকিৎসকদের দেখাতে পারেননি তিনি।
জানালেন, কিছুদিন আগে দুর্ঘটনায় তার হাত ভেঙে যায়। তার হাতে রড ঢুকানো হয়েছে। ডাক্তার দেখাতে না পেরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে চেয়ারে বসে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
সিদ্দিক বলেন, ‘আমাগো ট্যাহা-পয়সা নাই। এইহানে আইসলে হেরা কইলো আইজকা ডাক্তার নাই গা। ছুটিত গেছে। আইতে অইবো আগামী বুধবার। কিন্তু এই যে আইতে যাইতে ট্যাহা খরচ হইয়া গেলো, এইবা পরে আওনের সময় পামু কই। ’
‘আবার এহানে এক লোক (অর্থাৎ দালাল) কইছিলো প্রাইভেটে যোগাযোগ করায় দিবো। কিন্তু হেইখানে চিকিৎসা করানের মতো ট্যাহা কই পামু। তাই যাই নাই। এদিকে প্রেসক্রিপশনে কি লেখছে হেইডাও কইতে পারি না। ড্রেসিং করানো লাগবো কিনা তাও জানি না। ’ শুধু সিদ্দিক-ই নন, ছুটির ফাঁদে পড়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রোগীদেরও একই অবস্থা।
বুধবার পঙ্গু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের ওয়ার্ডের বারান্দায় পায়ে রড ঢুকানো অবস্থায় বসে আছেন দেলোয়ারা বেগম (৫০)। ওয়ার্ড খালি থাকলেও গত তিনদিন ধরে তিনি বারান্দায় চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছেন।
তার সঙ্গে আছেন স্বামী আব্দুল খালেক। জানালেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গত ২ ফেব্রুয়ারি তার পা ভেঙে যায়। এরপর থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা নেন তিনি। মাঝে বাড়ি গেলেও ব্যথা বাড়ায় ফের হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু ছুটির কারণে কোনো চিকিৎসাই করাতে পারেননি দেলোয়ারা বেগম।
দেলোয়ারার স্বামী খালেক বলেন, ডাক্তার দেখাইতে পারি নাই। আর ডাক্তারের কাগজপত্র না থাকায় হাসপাতালে ওয়ার্ডে সিটও পাইতাইছি না।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপত্রে ওই তারিখেই আসতে লিখে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. আবদুল গণি মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আজ তো ছুটির দিন। রোগীরা এতো দূর থেকে আসছেন, দেখে আসবে না কেন? এটা তো তাদের ভুল। আর প্রেসক্রিপশন করার সময় তো এতোটা দেখার সময় থাকে না যে কবে সরকারি ছুটি? এটা রোগীদেরই বুঝতে হবে।
কিন্তু রোগীদের পরিস্থিতি জানানোর পর তিনি বলেন, আপনি আমাকে এসব রোগীদের বিস্তারিত দেন। আমি জরুরি বিভাগে বলে দিচ্ছি। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা দেখবেন।
এদিকে ইনডোর ও জরুরি বিভাগের ক্ষেত্রে একই দশা দেখা গেলেও বহির্বিভাগে রোগীদের এমন ভোগান্তির চিত্র পাওয়া গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও।
টানা ছুটির কারণে রাস্তা ফাঁকা থাকায় গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ আরও দূর দুরান্ত থেকে রোগীরা আসছেন চিকিৎসা সেবার জন্যে। কিন্তু ছুটির কারণে চিকিৎসা ছাড়াই তাদের ফিরতে হয়েছে।
এ সময় একাধিক রোগী ছুটির দিনে বিশেষ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮
এমএএম/আরআইএস/