এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিক সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, হার্টের এবং চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণসহ বিশেষক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ হিসেবেও থায়রয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়।
শুক্রবার (২৫ মে) বিশ্ব থায়রয়েড দিবস। ২০০৯ সাল থেকে সারা বিশ্ব এ দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদযাপিত না হলেও থায়রয়েড রোগ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো গত কয়েক বছর ধরেই দিবসটিকে যথাযথভাবে পালন করছে।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) এ বছর বিশ্ব থায়রয়েড দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে শনিবার (২৬ মে) ঢামেকের গ্যালারি ১-এ বৈজ্ঞানিক অধিবেশনের আয়োজন করেছে।
বিইএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান জানান, বাংলাদেশে থায়রয়েড সমস্যার সকল ধরণকে এক সঙ্গে হিসেব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। ভারতের অবস্থাও অনেকটা এরকমই। প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ থায়রয়েড ও হরমোনের বৃদ্ধি জনিত সমস্যায় ভোগে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে এর হার ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে থাকতে পারে।
শিশুদের এ রোগে আক্রান্ত হবার বিষয়ে তিনি জানান, নবজাতক শিশুদেরও থায়রয়েডের হরমোন ঘাটতি জনিত সমস্যা হতে পারে। থায়রয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরর্বতী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না।
তিনি জানান, বাংলাদেশ একটি গলগণ্ড বা ঘ্যাগবহুল মানুষের দেশ। গলগন্ড রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেলেও তা ৮.৫ ভাগের কম নয়। থায়রয়েড ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধির দিকে। বাংলাদেশের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গলগন্ড রোগীদের ৪.৫ ভাগের কাছাকাছি থায়রয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান জানান, থায়রয়েড হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক থেকেও থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফুলা (গলগন্ড) রোগ হয়ে থাকে, যাকে আমরা ঘ্যাগ রোগ বলি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। আয়োডিন শরীরে অতি প্রয়োজনীয় এবং তা থায়রয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশে থায়রয়েডের চিকিৎসা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিইএসের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে থায়রয়েডের রোগীরা এদেশে চিকিৎসা পেয়ে আসছে। বিভিন্ন হাসপাতাল এ হরমোন জনিত রোগটির চিকিৎসা দিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢামেকসহ দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের হরমোন বিশেষজ্ঞরা এ কাজে নেতৃত্ব দিলেও পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ও অন্যরাও এর যথাযথ অংশিদার।
এছাড়া নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, গাইনী বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, প্যাথলজিসহ অন্যান্য রোগ নির্নয়কারী স্বাস্থ্য সেবাদানকারিরাও বাংলাদেশের থায়রয়েড হরমোন ও গ্রন্থির বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এমএএম/এইচএমএস/এসআরএস