বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও আমেরিকার ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির গবেষকদের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। বিএসএমএমইউ’র লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত জন উইলি প্রকাশনীর জার্নাল অব গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজি’র জানুয়ারি সংখ্যায় গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ মে) সিরডাপ মিলনায়তনে প্রথম আন্তর্জাতিক ‘ন্যাশ’ (যকৃতে প্রদাহ) দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ও কারণ’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
গবেষক দলটি ফ্যাটি লিভার ডিজিস বা লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং দেশের বৃহত্তম চার বিভাগের ৪টি জেলা শহর ও ৪টি উপজেলা শহরে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ গবেষণাটির জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলেছিলো। ২ হাজার ৭৮২ জন সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মক্ষম ব্যক্তি এই গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৯৪ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৮৮ জন নারী। অংশগ্রহণকারীরা ছিলো ১৮ থেকে ৮৫ বছর বয়সী এবং তাদের গড় বয়স ছিলো ৩৪ বছর।
গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামের স্থূলকায় নারীরা (৭৩ দশমিক ২১ শতাংশ)। এছাড়া ডায়াবেটিসে ৭১ ভাগ এবং উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের ৬৩ ভাগ লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাবে রয়েছে। তাছাড়া স্থূলতায় আক্রান্তদের ৬৪ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারে চর্বি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়া স্থূলতায় আক্রান্ত হলে ১০ দশমিক ৭১ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের প্রায় ২ দশমিক ৭১ গুণ বেশি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিবাহিতদের মধ্যে লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে।
গবেষোণায় উল্লেখযোগ্যভাবে বলা হয়, নিন্ম আয়ের চেয়ে উচ্চআয়ের ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় দেড় গুণ বেশি। তবে নারী-পুরুষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ভেদে রোগের প্রাদুর্ভাবে কোনো ভিন্নতা দেখা যায়নি। মূলত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুদ্দীন আহমদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমীর খসরু। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, স্কয়ার হাসপাতালের কনসালটেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. শেখ বাহার হোসেন ও ডা. মোতাহার হোসেন ও গবেষণা দলটির সদস্য ডা. মো. শাহিনুল আলম, ডা. গোলাম আজম ও ডা. মো. গোলাম মোস্তফাসহ প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এটাই প্রথম গবেষণা যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগের গবেষণাগুলো মূলত হাসপাতাল নির্ভর ছিলো। নতুন এই গবেষণা লিভারে চর্বি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার আওতায় আনতে এবং লিভার রোগজনিত মৃত্যু কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশের জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করলে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বলে। লিভার বা যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। প্রদাহ সৃষ্টি করা ছাড়াও লিভারের চর্বি রোগ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এমএএম/এমএমএস