যে কোনো শিশুর বিকাশের সাথে সাথে কিছু কিছু আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় অভিভাবকদের ধৈর্য না হারিয়ে বরং একটু বেশি সচেতন হতে হবে।
এ রচনায় শিশুদের এমন কিছু আচরণগত সমস্যা ও অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
বদমেজাজি বা ভিন্ন স্বভাবের শিশু
সাধারণত দু থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ ধরনের শিশুরা সব কাজে এবং আচরণে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তাদের সংশোধন করানোর জন্য যতই চাপ প্রয়োগ করা হোক না কেন, তাদের নেতিবাচক মনোভাব ততই বেড়ে যায়।
করণীয়
• শিশুদের এই জাতীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বিপুল ধৈর্য্য প্রদর্শন ও ভালো আচরণ করতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। শিশুকে এ সময় কোনোভাবেই বকাবকি বা মারধর করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, এ সময় অভিভাবকদের ব্যবহার যেন শিশুর কাছে সবসময় ইতিবাচক বা পজিটিভ থাকে।
• শিশুদের ভুলত্রুটিগুলো এমনভাবে তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে, যেন তারা বুঝতে পারে যে, পরিবারের সবাই জানে তার নেতিবাচক মনোভাবের পেছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। তবে পাশাপাশি এর সাথে তাকে এটাও ভালোভাবে বোঝাতে হবে যে, তার এ ধরণের আচরণ করা ঠিক নয়। আচরণ পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে শিশুদের তাদের অধিকতর পছন্দের কাজকে বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
• শিশু যদি মারাত্মক ধরনের কোনো ভুল বা অপরাধ করে থাকে (যেমন : কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কাউকে মারা, চুরি, গালাগাল, ভাঙচুর ইত্যাদি), তাহলে পরবর্তী সময়ে এর জন্য ক্ষমা চাওয়া, জিনিস ফেরত দেওয়া ইত্যাদি করা শিশুকে সুকৌশলে শেখাতে হবে।
বেশি চটপটে শিশু (হাইপার একটিভ চাইল্ড)
• এ ধরনের শিশুরা বাড়াবাড়ি রকমের কর্মচঞ্চল থাকে। তবে তারা কোনো কিছুতেই তেমন মনোযোগ দিতে চায় না। আবার কখনো কখনো বেশ উগ্র আচরণ করে। এদের মেজাজও সবসময় খিটখিটে থাকে।
• এ ধরনের শিশুদের ঘুম হয় কম। তারা সহজে কাউকে বন্ধু বানায় না। আবার পোশাক-আশাক আর আচার-ব্যবহারে এরা হয় খুব অগোছালো।
• এরা খুব দ্রুত কথা বলে। আর অধিকাংশ সময়েই এভাবে কথা বলতে গেলে বাধাগ্রস্ত হয়।
• লেখাপড়ায় এ জাতীয় শিশুরা সাধারণত অমনোযোগী হয়। যদিও তাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক থাকে।
¬করণীয়
• প্রথমেই অভিভাবকদের বুঝতে হবে, এটা কঠিন কোনো সমস্যা নয়। শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রদর্শন করে এবং ধৈর্য্য ধারণ করে এসবের সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
• এ জাতীয় শিশুদের চোখের বা শ্রবণেন্দ্রিয়ের কোনো সমস্যা আছে কি না চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা পরীক্ষা করে দেখুন। বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে স্নায়ুতন্ত্রের কোনো সমস্যা আছে কিনা তাও দেখতে হবে।
• স্কুল বা প্রাইভেট টিউটরের কাছে শিশুদের এ ধরনের সমস্যার কথা জানাতে হবে এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে শিশুর পড়ার রুটিন ঠিক করে নিতে হবে।
আঙুল চোষা, ¬দাঁতে দাঁত ঘষা বা নখ কামড়ানো
• অভিভাবকরা সচরাচর যেসব শিশুর প্রতি অবহেলা করে থাকেন, সে ধরনের শিশুদেরই এসব সমস্যা বেশি দেখা যায়। এরকম কোনো আচরণ করে থাকলে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
• শিশুদের যথাসম্ভব উৎফুল্ল পরিবেশে রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, এই সব অভ্যাস ঠিক নয় এবং এগুলো তাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
• যে শিশুদের আঙুল চোষার অভ্যাস আছে, তাদের নখ সবসময় ছোট করে কেটে রাখতে হবে, হাত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং অপুষ্টি ও কৃমি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে। এর বাইরে আঙুল না-চোষার জন্য কোনো তেতো ধরনের জলীয় পদার্থ আঙুলে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে।
• শিশু তার বদ-অভ্যাস যদি অল্প সময়ের জন্যও (বা সাময়িকভাবে) ত্যাগ করে, তার জন্যও শিশুকে খুবই প্রশংসা করুন। সম্ভব হলে এর জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১১