বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে একজন, জুন মাসে তিনজন ও জুলাই মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও ৩ জন শিশু।
এর আগে জানুয়ারি ও জুন মাসে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, হলিফ্যামিলি ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে মোট চার নারীর মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। গত জুন মাসেই ২৫০ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৮৮ জন।
বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রথমে জ্বর, বমি ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে প্রায় ৪/৫ দিন ভোগার পর হাসপাতালে ভর্তি হয় রোগীরা। হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এসব রোগীরা প্রাণঘাতী এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এসব রোগীর মধ্যে থেকেই ৭ জন ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম ও হেমোরেজিক শকডে মারা গেছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম জানান, জুলাই মাসে কমপক্ষে ৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরা সবাই সর্বনিম্ন ৩ দিন থেকে ৫ দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট আকারে হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য রোগ তবে নারী ও শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে তারাই এগিয়ে আছেন।
এডিস মশা সাধারণত বাসাবাড়িতে ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। এ রোগ থেকে দূরে থাকতে বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না ও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেননা মশার ওষুধও ইদানিং মশাদের জন্য রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই বেশিরভাগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলছে। উত্তর সিটিতেই এডিস মশার প্রকোপ বেশি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ অলম শরীফ খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এটা খুব অথেনটিক একটি বিষয়। আমরা আগে বসবো, তারপর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে পারব।
বিগত বছরগুলোর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত ও ২০০০ সালে সর্বোচ্চ ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৬ সালে হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০ জনে বৃদ্ধি পায়। ওই বছর ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৯ জন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৮ জনে নেমে আসে।
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার শুরুতেই অর্থাৎ ২য় মাসের (জুলাই) মধ্যেই ৭ জনের মৃত্যুকে আশঙ্কাজনক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ