শনিবার গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে পশুর যে রোগগুলো সাধারণত দেখা দিচ্ছে, সেগুলো কোরবানির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর নয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পশুগুলো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাট এলাকার বাইরে ঠাণ্ডা জায়গায় রেখে চিকিৎসা করিয়ে আবার হাটে ফেরত আনা হচ্ছে। তাছাড়া অল্প অসুস্থতার ক্ষেত্রে পশুকে স্বস্থানে রেখেই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলছেন মালিক ও ব্যাপারিরা।
যে ধরনের রোগ ও লক্ষণ গাবতলী পশুর হাটে দেখা গেছে সেগুলো হলো- নাক-মুখ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণের লালা নিসৃত হওয়া, শরীর ব্যাথা, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা। বেশিরভাগ বড় আকারের গরুর ক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতি দেখা গেছে। ছাগল কিংবা মহিষ ও তুলনামূলক মাঝারি ছোট আকারের গরুর ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগের প্রভাব খুব কম বলেও জানা যায়।
পাবনা থেকে আসা আক্কাস ব্যাপারির বিশালদেহী গরু হাটে হঠাৎ করে মুখ দিয়ে অতিরিক্ত হারে লালা ছাড়তে শুরু করে। পরে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে গরুটির মাথায় পানি দেওয়ার জন্য।
বাংলানিউজকে আক্কাস বলেন, গরুটি পাবনা থেকে আইজ (আজ) হাটে আইছে (আসছে)। যানজটসহ সব কিছু মিলায়া (মিলে) দুই দিন গাড়িতে আছিলো (ছিল)। গরম লাইগা (লেগে) আর জার্নি কইরা (করে) অসুস্থ হইয়া (হয়ে) গেছে। এহন (এখন) হাটের বাইরে নিয়া যাই।
বিশালদেহী গরুটির দাম জানতে চাওয়া হলে তখনও ঠিক হয়নি বলে জানান আক্কাস ব্যাপারি।
এদিকে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো পশুর ডাক্তার হাটে দেখা যায়নি। হাটে স্ব-উদ্যোগে বা বেসরকারিভাবে বেশ কয়েকজন ডাক্তার ছিলেন এবং শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে। আর হাট এলাকায় রয়েছে একটি ওষুধের দোকান।
দোকান মালিক সূত্রে জানা গেছে, ওষুধের ব্যবসা এবার খুব ভালো চলছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার পশুর ওষুধের ক্রেতা বেশি। এর মধ্যে খাবার স্যালাইন ও বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশনে ব্যবহৃত ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানে চিকিৎসক যারা আছেন তারা সরকার নির্ধারিত ডাক্তার না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসছে বেশিরভাগ।
ওই দোকানে ওষুধ কিনতে কিনতে কুষ্টিয়া থেকে আগত আলম ব্যাপারি বাংলানিউজকে বলেন, গরুর গায়ে ব্যথা। এর জন্য খাচ্ছে না। তাই ওষুধ নিতে আসলাম।
হাটের চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, গরমে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রমণ করার কারণে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা’র মতো সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ খেলে আবার ঠিক হয়ে যায়। এই গরুগুলো আকারে বেশ বড়। শরীরে চর্বি বেশি। এরা ঠাণ্ডা পরিবেশে অনেক যত্নে বড় হয়। কোরবানির সময় এই ধকলটা এরা নিতে পারে না। তবে এসব বড় কোনো সমস্যা না।
এ বিষয়ে প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, হাটে মূলত প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সময় নাক দিয়ে পানি ঝরলে অন্য জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
হাটে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পশু চিকিৎসক থাকার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৩টি হাটে রোববার (১৯ আগস্ট) থেকে আমাদের পশু চিকিৎসক টিম থাকবে। সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত তারা কাজ করবে। ৫ সদস্যের টিমে থাকবেন একজন রেজিস্টার্ড ভেটেনারিয়ান, দুইজন ইন্টার্নি ভেটেনারিয়ান, একজন সাব টেকনিক্যাল স্টাফ এবং একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
এমএএম/টিএ