মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউ’র ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোগীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্বকালে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা আসার পর বিএসএমএমইউকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ নেন।
‘দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ইডিসিএফের অর্থায়নে ১০৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ২টি বেসমেন্টসহ ১১তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। পরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ওপরের দিকে দুই তলা সম্প্রসারণ করা হবে। ১৩তলা ভবনটিতে থাকবে ১ হাজার শয্যা। দেশে প্রথম সেন্টার ভিত্তিক চিকিৎসাসেবা চালু হবে এতে। বাংলাদেশে এ ধরনের হাসপাতাল এই প্রথম। বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে এ ধরনের সেন্টার ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু আছে’।
তিনি আরও বলেন, নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনের প্রথম পর্যায়ে থাকবে স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার।
‘এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। রোগীবান্ধব এই সবুজ হাসপাতালটিতে থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। উন্নত মানের বহির্বিভাগ ও ইনফো ডেস্কে সমৃদ্ধ এই হাসপাতালটিতে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টারও চালু থাকবে’।
বাংলাদেশের জনসাধারণ সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা প্রদান করা হবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এখানে চিকিৎসাসেবার টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। এছাড়াও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার সুযোগ চালু থাকবে। অর্থাৎ দেশের প্রান্তিক জনগণের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে কোনো সমস্যা থাকবে না।
‘এ হাসপাতালে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুবিধা থাকবে। উন্নত চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত হবে। এ লক্ষ্যে ৮০ জন চিকিৎসক ৩০ জন নার্স ও ১০ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা নেবে ২ থেকে ৪ হাজার রোগী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমরা ৪৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই ছাড়া সব সুযোগ-সুবিধা ও ওষুধ বিনামূল্যে দেই। তাদের সার্জারির প্রয়োজন হলেও সেটা বিনামূল্যেই হয়। আর মূল হাসপাতালে টিকেট ব্যবস্থা খুব দ্রুত অটোমেশন করা হবে। এতে ভিড় কমবে। কোরিয়ার সঙ্গে এ ঋণ প্রকল্প টি ৪০ বছর মেয়াদী। প্রথম পনেরো বছর কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তারপর থেকে ০.১ শতাংশ সুদে ঋণ শোধ দেওয়া শুরু করবে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণতকরণে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বেজমেন্টসহ সাত তলা বিশিষ্ট দু’টি সর্বাধুনিক বহির্বিভাগ নির্মাণ, কেবিন ব্লকের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, মেডিকেল কনভেনশন সেন্টার, পাঁচ তলা বিশিষ্ট ডায়াগোনেস্টিক ও অনকোলজি ভবন নির্মাণ এবং পাঁচ তলা বিশিষ্ট ডক্টরস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ডায়াগনস্টিক ও অনকোলজি ভবনে থাকবে অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও অটিজম বিষয়ে গবেষণার জন্য বিএসএমএমইউ’র একমাত্র ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার (ইপনা)। এ ভবনে থাকবে সারভাইক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেন্টার ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ৩১ জুলাই। শেষ হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
এমএমএ/এনএইচটি