সোমবার (১ অক্টোবর) শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ওপর অর্ধ দিবসব্যাপী একটি সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ৩৫ বছর বা তদূর্দ্ধ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ওপর নীতি নির্ধারনী সম্মেলন শ্রীলংকার জাতীয় পলিসি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ডা. হর্ষ ডি সিলভা উদ্বোধন করেন। শ্রীলংকা সরকারের মন্ত্রী, নীতি নির্ধারক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এক টেবিলে বসে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের ধাপসমূহ চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিডনি রোগ বিষয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যোগদান করেন আইসিডিডিআরবি’র ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিসের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ। আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবদুল আলিম, অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়নস অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তফা জামান।
সম্মেলনে কোবরা-বিপিএস (কন্ট্রোল অব ব্লাড প্রেশার অ্যান্ড রিস্ক অ্যাটেন্যুয়েশন- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা) নামক ত্রিদেশীয় গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক তাজিন জাফর বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ইউরোপীয়দের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়দের মধ্যে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ ৫-৭ বছর আগে দেখা দেয়।
কোবরা-বিপিএস বাংলাদেশের প্রধান গবেষক ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, কোবরা-বিপিএস পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এই ইন্টারভেনশনটি প্রচলিত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকদের মাধ্যমেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকরা এই কোবরা-বিপিএস কৌশলের প্রতি তাদের উৎসাহ দেখিয়েছেন এবং এটি বর্তমান ৪র্থ হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর প্রোগ্রাম (২০১৭-২০২২) এর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তফা জামান বলেন, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হলে সারা জীবনব্যাপী চিকিৎসা নিতে হয় অন্যথায় রোগী ধীরে ধীরে শারীরিক অক্ষমতার দিকে যেতে পারে এবং এমনকি মারাও যেতে পারে। এর জন্য একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন যেখানে রোগীদের জন্য স্বল্পমূল্যের ওষুধ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী ও দরিদ্র রোগীরা যেন সারাজীবন চিকিৎসা চালিয়ে নিতে পারে।
সম্মেলনে ডা. আলিম বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মৃত্যু এবং অসুস্থতার হার কমাতে বাংলাদেশে সরকার একটি পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো এবং অসংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করা এই পরিকল্পনার অংশ।
সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোয়েপ পার্ক, যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের জিল জোনস, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেট হান্ট, যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এবং ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক শাহ ইব্রাহিম এবং আইসিডিডিআরবি’র বোর্ড অফ ট্রাস্টির সভাপতি ডা. রিচার্ড স্মিথ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক অসংক্রামক রোগ বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. শান্তি মেন্ডিস, অধ্যাপক জাফর, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এবং সারা বিশ্ব থেকে আগত গবেষকরা এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ