স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৭৯ জনে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানা গেছে, এবারে ডেঙ্গুর প্রকোপে মৃত্যুর ঘটনা আরও ঘটেছে। সব মৃত্যুর খবর স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের রেকর্ড বুকে নেই। হাসপাতালগুলো থেকেও সেসব সংবাদ আসেনি বা বেশ কিছু রোগী বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেছে।
চলতি বছরের ৯ জুন প্রথম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। ৩৪ বছরের ফারজানা আক্তার নামের ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন ৭ জুন। একই মাসে ৩১ বছরের রোজলিন বৈদ্য এবং ২৬ বছরের সেঁজুতি নামে আরও দু’জন মারা যান। এরপর সর্বশেষ ৩ বছর বয়সী সুমাইয়া। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১৩ জনই নারী ও শিশু। ২০১৬ সালে মোট ১৪ জন এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল।
চিকিৎসকদের মতে, প্রথমে জ্বর, বমি ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে প্রায় ৪/৫ দিন ভোগার পর হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে এসব রোগীরা এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম ও হেমোরেজিক শকডে মারা যায়। আর প্লেইন ডেঙ্গুতে তুলনামূলক অল্প রোগী মারা গেছে। মূলত রক্তের প্লাটিলেট কমেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে যে কোনো জ্বর ১ দিন অতিক্রম করলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যানুসারে, জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট আকারে হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য রোগ, তবে নারী ও শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকার কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে তাদের সংখ্যাই বেশি।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, পূর্ব তিমুর ও উত্তর কোরিয়ায় ডেঙ্গু প্রকোপ বেশি। দ্রুত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলগুলোতে ওই জীবাণুবাহী রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বাংলানিউজকে জানান, গত বছর চিকুনগুনিয়ার প্রভাব বেশি দেখা গিয়েছিল। ডেঙ্গুর দিকে তেমন নজর দেয়া হয়নি। আমরা সেবার বলেছিলাম এদিকেও সবার নজর দেয়া উচিৎ। এবার ঠিক তাই হয়েছে। ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রভাব দেখা দিয়েছে। আর এ রোগটা এরকমই কোনো বছর বেশি হয় আবার কোনো বছর কম হয়। তবে বর্তমানে আগের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আবার এক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাবও আছে।
ডেঙ্গুর প্রতিরোধ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আবার ঘরে ছাড়াও বাইরেও অনেক মশা জন্মাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে অল্প অল্প বৃষ্টি হলেও পানি ঠিকই জমে থাকছে। বিক্ষিপ্তভাবে জমা অল্প পানিতেও এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। কিন্তু পানি যদি ভেসে যাবার মতো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এতো মশার জন্ম হতো না। ঢাকায় অনেক ভবনের কনস্ট্রাকশনের কাজ চলে। যেখানে পানি এমনিতেই জমে থাকে। এসব মশাগুলো ঘরে ঢোকে। ফুলের টবে, ছাদের বাগানের পানিতে এমনকি ঘরে বিভিন্ন কারণে অল্প সময়ের জন্য জমে থাকা পানিতেও এ মশা জন্মায়। তাই আমাদের এসব পানি জমানো থেকে বিরত থাকতে হবে বা কোথাও পানি জমতে দেখলেই তা ধ্বংস করতে হবে নিজেদের স্বার্থে।
এছাড়া সবসময় মশারী ব্যবহার, মশার কয়েল বা বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বাজারে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ