এরপর গত তিন মাস ধরে স্বল্প খরচে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। ভাসমান এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীর সংখ্যাই বেশি।
সরেজমিন দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার গুদারাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে দুইতলা ‘জীবনতরী’ হাসপাতালটি ভিড়ে রয়েছে। এ হাসপাতালে লাইনে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন রোগীরা। পরে সারিবদ্ধভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যান্য হাসপাতালের মতো ভাসমান এ হাসপাতালেও রয়েছে রিসিপশন, ডাক্তার চেম্বার, অপারেশন থিয়েটার, রোগীদের বেড, অফিস কক্ষসহ সবকিছু। এছাড়া জরুরি রোগী আনা-নেওয়ার জন্য ভাসমান এ হাসপাতালে বাঁধা রয়েছে দু’টি স্পিডবোড, নদীর পাড়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছে।
ভাসমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন ওই হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। এ হাসপাতালটি ১২ বেডের অনুমোদিত। এখানে নাক, কান ও গলা অভিজ্ঞ একজন, চোখের একজন এবং একজন অর্থোপেডিকস চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া চারজন নার্স, দুইজন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জন জনবল রোগীদের সেবার নিয়োজিত রয়েছেন।
এখানে নিয়মিত ডায়াবেটিকস, এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ‘জীবনতরী’ নামে এ হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। ভারতীয় ও আমেরিকান লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানির অপারেশন করা হয়। রয়েছে ফ্যাকো সার্জারির ব্যবস্থা। এছাড়া স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা নাক, কান, গলা, ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীর প্লাস্টিক সার্জারিসহ আপারেশন করা হয়। বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু রোগীর সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয় এ হাসপাতালে। গত ৩০ জুন ভাসমান এ হাসপাতালটি কালীগঞ্জের গুদারাঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে ৭ জুলাই থেকে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়।
গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, নড়াইল ও রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবনতরী’ দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা সূরুজ মিয়া জানান, চোখে সমস্যা নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছি। এখানে অল্প টাকায় চিকিৎসা পাচ্ছি। যা অন্য কোন হাসপাতালে গেলে অনেক টাকা লাগতো। এ ধরনের হাসপাতাল আগে দেখিনি। হাসপাতাল খুঁজতে হয় না হাসপাতালই রোগীদের দুয়ারে পৌঁচ্ছে যাচ্ছে।
ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। গত ৩ মাসে এখানে ২০০ রোগীর চোখের অপারেশন করা হয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার রোগী। প্রতিদিন এভাবে রোগী আসলে আরো ৬ মাস এখানে থাকবো। রোগীর সংখ্যা কমে গেলে অন্য কোন এলাকার উদ্দেশ্যে পাল তুলবে ‘জীবনতরী’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
আরএস/জেডএস