সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণেই এ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত অধিক বয়স, ক্যানসার, মেদবহুল শরীর, গর্ভাবস্থা, জন্মনিরোধক পিল, হাঁটু অথবা কোমরে অপারেশন, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, করোনারি হৃদরোগ, মহাধমনীতে চর্বি জমা বা অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাওয়া এ ধরনের প্রভৃতি কারণে এ মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শনিবার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে বিশ্ব থ্রাম্বোসিস দিবস।
বিশ্বে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব হিমোস্ট্যাসিসে’র উদ্যোগে দিবসটি পালিত হলেও বাংলাদেশে বিশ্বের ৯০টি দেশ ও ১১০০ টি সংগঠনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ দিবসটি পালন করেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, আমাদের মানুষের শরীরে দুই ধরনের শিরা আছে। একটি খালি চোখে দেখা যায়, যা চামড়ার ঠিক নিচে থাকে। আরেকটি দেহের মাংশপেশির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সমস্ত শিরায় বিশেষ করে পায়ের শিরায় রক্তজমাট বেঁধে ডিপ ভেইন থ্রাম্বোসিস (ডিভিটি) সৃষ্টি করে। এরফলে হঠাৎ পায়ে ব্যথাসহ পা মোটা হতে থাকে।
তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে পা ফোলা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, এমনকি পায়ে ঘাঁও হতে পারে। অনেক সময় এ রক্ত জমাট ফুসফুসে ঢুকে প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটাতে পারে। অনেক সময় থ্রাম্বো-অ্যাম্বোলিজমের কারণে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং আঙ্গুলের মাথা কালো বর্ণ ধারণ করে।
চিকিৎসকদের মতে, কালো হওয়া মানেই ওই অংশ মৃত বা মৃতপ্রায়। এই জমাট বাঁধা রক্তই পরবর্তীতে গভীর শিরায় প্রবেশ করে। ফলে ডিভিটি (রক্তনালী একটি রোগ) সৃষ্টি হয়।
ডিভিটি’র বিষয়ে বারডেম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. এমএমজি সাকলাইন বাংলানিউজকে জানান, ডিভিটি খুব মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ণ হতে পারে। জমাটবদ্ধ হত্তয়া রক্তের দলা শিরা দিয়ে ছুটলেই বিপদ।
ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ হয়ে এক মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে। একে পালমোনারি এমবলিজম বলে। সাধারণত দীর্ঘক্ষণ ভ্রমণের সময় পা নাড়ালে, অপারেশনের পর দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক নড়াচড়া করলে, দীর্ঘক্ষণ শুয়ে বা বসে না থাকলে ডিভিটি প্রতিরোধ করা যায়।
এছাড়া অনেকের ঘাড়ে অতিরিক্ত হাড় থাকে। এ হাড় ঘাড়ের রক্তনালীতে চাপ দেয়। তখন রক্ত স্ফিত হয়ে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। অনেক সময় এ জমাটবদ্ধ রক্ত হাতে গিয়ে তার কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। আবার পেটের বা বুকের মূল রক্তনালীও স্ফিত হয়ে যেতে পারে। এরকম জমাটবদ্ধ রক্ত নষ্ট করতে পারে পা।
থ্রাম্বোসিসের কারণে হৃদপিন্ডেও রক্তজমাট বাধতে পারে। অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন, হৃদপিন্ডের ভালভে সমস্যা থাকলে, হৃদপিন্ডে ভালভ লাগানো থাকলে, ব্লকজনিত কারণে হৃদপিন্ডের ওয়াল দুর্বল থাকলে রক্ত জমাট বাধতে পারে।
এক্ষেত্রে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে এবং হাত-পায়ের দিয়ে জমাট বাধা রক্ত গিয়ে থ্রাম্বোসিসের বিভিন্ন উপশম দেখা দিতে পারে। যেমন হাত-পায়ে ব্যথা করা, ফুলে যাওয়া, কালচে রঙ ধারণ করা ইত্যাদি।
সর্বপরি চিকিৎসকরা অতিরিক্ত মেদ কমাতে ও দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় বসে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ধরনের সমস্যা পরিলিক্ষিত হলে দ্রুত চিকিৎসকের তথা ভাসকুলার সার্জনদের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সামগ্রিক বিষয়ে ডা. এমএমজি সাকলাইন বাংলানিউজকে আরও বলেন, থ্রাম্বোসিসের কারণে সৃষ্ট ব্যথা ওষুধ খেলেও যায় না। ফলে রোগী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই খেয়াল রাখতে হবে রোগের লক্ষণগুলোর দিকে। এ রোগের উপশম দেখা দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাতে সময় থাকে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। এর মধ্যেই অপারেশন করে রক্তের দলা সরাতে হয়। না হলে পরিস্তিতি খারাপ হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিরোধের দিকে। অসাড় হয়ে পড়ে থাকা যাবে না, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেওয়া যাবে না বা নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
এমএএম/এএটি