সেবার পরিধি ও গুণগত মান কয়েকগুণ বাড়া ছাড়াও সাধারণ শয্যা, কেবিন, আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাথ ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটারের সুবিধা বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। ফলে সল্পব্যয়ে দেশের দরিদ্র হৃদরোগীরা পাবে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯৫০ থেকে ১ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। যার বিপরীতে হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা ৪১৪টি। এছাড়া বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার রোগী সেবা নেন। কিন্তু পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে হাসপাতালটিতে শুরু হয়েছে ভার্টিক্যাল এক্সটেনশনের কাজ। এই কাজ শেষ হলেই প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আফজালুর রহমান ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারিতে যোগদানের পর থেকে সেবার মানোন্নয়নে আছেন বদ্ধপরিকর। শুরুতেই তিনি হাসপাতালের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন এবং সমস্যা সামাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।
ডা. আফজালুর রহমান উল্লেখযোগ্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে, হৃদরোগীদের বিনামূল্যে স্ট্রেপটোকাইনেজ ইঞ্জেকশন সরবরাহ করা। সিসিইউ-১ ও সিসিউ-২ তে বিনামূল্যে এ ইনজেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ইনজেকশনের বাজারমূল্য সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর হাসপাতালে ভর্তিকৃত সকল রোগীদের প্রথম দুদিনে ৪টি করে বিনামূল্যে এনোক্সাপারিন ইঞ্জেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে।
তাছাড়া চলছে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। চালু হয়েছে হেল্প ডেস্ক। নিশ্চিত করা হয়েছে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন। রোগীর ভিজিটরদের জন্য ভিজিটর আইডি কার্ড ও সামগ্রিক সেবার বিষয়ে তথ্যবহুল ফরম। আরও রয়েছে অভিযোগ বাক্স। যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি অভিযোগগুলো জানতে পারে। উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে চালু হয়েছে নন ইনভেসিভ কার্ডিওলজি বিভাগ।
এছাড়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ক্যাথল্যাবে এফএফআর ও আইভিএএস মেশিন স্থাপন, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য স্টেন্ট, ভালভ ও অক্সিজেনেটর মেশিন ক্রয় করা।
সম্প্রতি হার্টের রোগে আক্রান্ত রোগীদের সমীক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে অনুসারে চলছে ওপেন হার্ট সার্জারি রোগীদের জন্য নতুন ও আধুনিক ৩টি হার্টলাং মেশিন স্থাপনের কাজ। ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য হাসপাতালটিতে ৬টি ওটি’র মধ্যে মাত্র ৩টি সচল ছিল। ইতোমধ্যে একটি হার্টলাং মেশিন মেরামত সম্পন্ন করে একটি ওটি চালু হয়েছে। সব মেশিন স্থাপন হয়ে গেলে ৬টি ওটিতেই একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হবে। এদিকে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি’র জন্য নতুন মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানা গেছে। এ দুই ধরনের মেশিন চালু হলে একসেঙ্গ ৬ জন রোগীর এনজিওগ্রাম করা যাবে।
জরুরি বিভাগের আধুনিকায়নে নতুন দুটি ইকো মেশিন, দুটি ইসিজি মেশিন, ১০টি অবজারভেশন বেড স্থাপন করা হয়েছে। পাশপাশি দুই শিফটে ৬ জন চিকিৎসক এবং ৩৩ নার্সের ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জটিল হৃদরোগীদের চিকিৎসায় অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোফিজিওলজি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আর চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী চিকিৎসকদের সুবিধার্থে ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি আধুনিকায়নের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একটি নতুন ১৪ তলা ভবন নির্মাণের কাজ ডিপিবিতে প্রস্তাবিত আছে। সেই ভবনের কাজ সম্পন্ন হলে কনসালটেন্ট রুম, ক্যাথ ল্যাব, সিসিইউ, পিসিসিইউ, কেবিন ওটি, আইসিইউ, কার্ডিয়াক সার্জারি এবং কার্ডিওলজি বিভাগের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড চালু করা হবে।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আফজালুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে পরিণত করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন গরিব রোগী যেন অর্থাভাবে চিকিৎসায় না পেয়ে ফিরে না যায় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল কেন্দ্রিক দুর্নীতি রোধকল্পে পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, হাসপাতালের কেনাকাটায় যেন কোন অনিয়ম না হয় সেজন্য সিএমএসডি’র মাধ্যমে সব যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন শক্তির কাছে নত হইনি। আশা করছি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ