বিচ্ছিন্ন হাত কখনো ফিরে পাবেন না ও বেঁচে থাকলে এই অবস্থায় জীবনযাপন করতে হবে ভেবেছিলেন তিনি। স্বজনরা তাকে নিয়ে আসেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক) হাসপাতালে।
হাসপাতালের বার্ন অ্যাণ্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান ও তরুণ চিকিৎসক এম এ মান্নানের নেতৃত্বে চিকিৎসকরা অস্ত্রেপচার করে হাতটি জোড়া লাগিয়ে দেন।
একইভাবে তিনমাস আগে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিশ্বনাথের দরাগাই এলাকার মৃত মাসুক মিয়ার ছেলে ইয়াসিন আলীর। গত ৮ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ওই চিকিৎসকরা তার বৃদ্ধাঙ্গুলিও দেহে স্থাপন করে দেন। বর্তমান ওই আঙ্গুলে চেতনা ফিরে এসেছে এবং নাড়াচাড়া করতে পারছেন তিনি। সোমবার (২৬ নভেম্বর) তাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সফলতার কাহিনী তুলে ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাহবুবুল হক।
হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধায় অপ্রতুলতা স্বত্বেও চিকি’সকদের সেবা দেওয়ার মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)হাসপাতালের বাইরে এই প্রথম এ ধরনের অঙ্গপ্রতিস্থাপনের সফল চিকিৎসা দিয়েছেন এই হাসপাতালেরই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জনরা। বিশেষ করে জখম হওয়া রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে জরুরি বিভাগের পাশে ক্যাজুয়েলিটি বিভাগ চালু করা হয়েছে।
তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. এম এ মান্নান এ দুই রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আগে রোগীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিন্তা করি। এই চিকিৎসায় আরো প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সাপোর্টের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চিকিৎসা নেওয়া দুই রোগী ৯৯ ভাগ সুস্থ। তবে হাত বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির আরো দু’টি অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে বলেন তিনি।
হাসপাতালের বার্ন অ্য্ন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হাসিব আহমদ বলেন, মারামারির ঘটনায় কোনো মানুষের অঙ্গহানির ঘটনা ঘটলে তা ১২ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন সম্ভব। এক্ষেত্রে রোগীর বিচ্ছিন্ন অঙ্গটি তাৎক্ষণিক পরিষ্কার করে একটি পলিথিন ব্যাগে রাখতে হবে। এরপর আরেকটি ব্যাগে বরফ নিয়ে অঙ্গ রাখা ব্যাগটি ওই ব্যাগে রেখে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন হওয়া ইয়াসিন ও লিটন।
ইয়াসিন বলেন, মাস তিনেক আগে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে আমি বৃদ্ধাঙ্গুলি হারাই। এ অবস্থায় আমার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা আমার আঙুল জোড়া লাগিয়ে দেন। এজন্য চিকিৎসকদের দোয়া ও আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।
হাত জোড়া লাগানোয় আবেগতাড়িত লিটন মিয়া। তিনি শুকরিয়া আদায় করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপাতির কোপে দেহ থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথমে হাতটি ফেলে দিতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো এভাবেই বাচতে হবে। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা বিচ্ছিন্ন হাতটি জোড়া লাগিয়ে দেন।
চিকিৎসক মান্নান আরো জানান, হাত জোড়া লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা ৯৯ ভাগ সফল। আরো দু’টি অপারেশন শেষে সম্পূর্ণরূপে লিটন সুস্থ হয়ে উঠবে আশাবাদী তিনি।
সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকলে সিওমেকে এমন চিকিৎসায় সিলেট সারাদেশের মধ্যে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে মনে করেন এ হাসপাতালের অন্যন্য চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এনইউ/এএটি