রাজশাহী শহরের শিরোইলে থাকা ঢাকা বাস টার্মিনালের সামনে গেলে রাস্তার পাশে প্রায় প্রতিটি দোকানেই দেখা যাবে অভিন্ন দৃশ্য। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে কোম্পানিগুলো।
অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে পয়েন্ট অব সেল বা তামাকের বিক্রয় কেন্দ্রে যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, প্রণোদনা, পুরস্কার বিতরণ বা উপহার প্রদান ও তামাকপণ্য বিতরণ বা এর প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরপরও তামাক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছে প্রকাশ্যেই। ফলে যুবকরা আরও বেশি ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। এজন্য রাজশাহীতে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনগুলো আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবকেই দুষছেন।
কেবল বাস টার্মিনাল এলাকাতেই নয়, মহানগর ঘুরে দেখা যায় সাগরপাড়া বটতলা, বোয়ালিয়া থানার মোড়, আলুপট্টি মোড়, কুমারপাড়া মোড়, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সিএন্ডবি মোড়, কোর্ট চত্ত্বর, বর্ণালীর মোড়, ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্ত্বর, তালাইমারী গোল চত্বর, কাজলা, বিনোদপুর বাজার, কাটাখালী, শালবাগান, নওদাপাড়া আমচত্বর ছাড়াও আচ্ছাদিত মার্কেট, নিউমার্কেট ও আরডিএ মার্কেটের অভ্যন্তরে এমন কাণ্ড চলছে।
মহানগরীর সাগরপাড়া ছোটবটতলা এলাকার একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কাচের শোকেসের মধ্যে খাদ্যপণ্য রাখা হয়েছে। তার ভেতরেই শোলা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের বড় একটি শোপিস রাখা হয়েছে।
তার মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বেনসন, গোল্ডলিফ ও স্টার সিগারেটের ২৪টি রঙিন প্যাকেট সাজানো। এর মধ্যে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে এইচডি ব্র্যান্ডের ডামি সিগারেট ও প্যাকেটের ডামি বা মডেল।
দোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাই ডেফিনেশন টেস্টেড’ নামে উন্নত কোয়ালিটির গোল্ডলিফ ব্র্যান্ডের নতুন সিগারেট বাজারে এসেছে। কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা এসে এইচডি সিগারেটের ডামি ও প্যাকেটের মডেলসহ একটি ক্যালেন্ডার এবং স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোর্ড প্রদর্শনের জন্য দিয়ে গেছে।
তবে নতুন ব্র্যান্ডের এ সিগারেটের সঙ্গে হাই ডেফিনেশনের কী সম্পর্ক সেই ব্যাপারে বিক্রয় প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করে স্পষ্ট উত্তর পাননি তিনি।
সাইফুল ইসলামের ধারণা, তেমন কোনো সম্পর্ক না থকেলেও সিগারেটের প্রতি একটু বাড়তি আকর্ষণের জন্য কোম্পানি নতুন এই সিগারেট বাজারজাত করেছে। এতে তরুণরাই আকৃষ্ট হচ্ছে বলেও জানান।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার সিগারেট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে সিগারেট নেওয়ার সময় এমন প্রচার সামগ্রী দিয়ে যায় কোম্পানির লোক। তবে এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন যে, আইনত দণ্ডনীয় তা জানা নেই তার।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তামাকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত সংগঠন এসিডি’র অ্যাডভোকেসি অফিসার শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, এটি সুস্পষ্টভাবে ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ এর ক,খ, এবং চ,ছ ধারা লঙ্ঘন। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত আইনে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না বা করাবেন না।
তামাকজাত দ্রব্যে প্রলুব্ধকরণের উদ্দেশ্যে তার কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে প্রদান বা প্রদানের প্রস্তাব করবেন না বা করাবেন না। আর কোনো ব্যক্তি যদি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করেন তাকে অনূর্ধ্ব তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক একলাখ টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা বারবার একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে ওই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন বলেও আইন রয়েছে, উল্লেখ করেন এসিডির এই কর্মকর্তা।
মহানগর এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রশ্নে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বলেন, রাজশাহীকে তামাকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা থাকায় কিছুদিন থেকে মোবাইল কোর্ট বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগিরই মোবাইল কোর্ট শুরু করা হবে। এতে আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
এসএস/এএ