মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও বাকি রয়ে গেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ক্যাপসুলগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ।
এর আগে এক চিঠিতে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে স্থগিত হওয়া ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন চালাতে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। ওই চিঠিতে বলা আছে, ৯ ফেব্রুয়ারি স্থগিত হওয়া ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতির কাজ চলছে। ’’
গত ১৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিলো। কিন্তু ক্যাপসুলগুলো মানসম্পন্ন না হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে এ ঘটনায় গঠিত কমিটি গত ২০ জানুয়ারি থেকে তদন্তের কাজ শুরু করে।
যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দিয়ে দিয়েছি। তদন্তে ক্যাপসুলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ল্যাবে কাজটা সম্পাদন করার কথা জানিয়েছি। ’
‘‘তবে সেগুলো হয়েছে কি-না জানি না। এই রিপোর্টটা হাতে পেলেই হয় তো পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এছাড়া শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলটাও খাওয়ানো জরুরি। এ জন্য আমরা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষের নিকট পুনরায় ক্যাম্পেইনের তারিখ সুপারিশ করেছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পেইনটি করার নির্দেশ দিয়েছে। ’’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থগিত হওয়ার কারণ উদঘাটনে টেকনিক্যাল বিষয়ক তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কমিটিও সে অনুসারে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে মূলত ক্যাপসুলগুলো মানসম্পন্ন নেই বলেই উল্লেখ করেছে কমিটি।
জানা যায়, শুরুতে ভারত থেকে আমদানি করা ক্যাপসুলগুলো মানসম্পন্ন না হওয়ায় ক্রয়-প্রক্রিয়ার সময় এর এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু পরবর্তীতে এনওসি ছাড়াই এসব মানহীন ওষুধ কেনা হয়। এদিকে পরবর্তী ক্যাম্পেইনের ক্যাপসুল দিয়ে এ মাসেই ক্যাম্পেইন করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চ. দা.) নায়ার সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের টেস্টিং ল্যাবে ক্যাপসুলগুলো দেওয়া আছে। কিন্তু রিপোর্ট এখনও জমা দেওয়া হয়নি। কারণ ক্যাপসুলগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ এখনও চলছে। ’
স্থগিত হওয়া ভারতীয় কোম্পানির ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের এনওসি না দেওয়ার কারণ হিসেবে নায়ার সুলতানা বলেন, ‘এনওসিতে ওইভাবে মান নির্ণয় করা যায় না। তখন আমরা এনওসি দিইনি কারণ একটি দেশীয় কোম্পানি মানসম্পন্ন এই ক্যাপসুল সরবরাহ করেছিলো। তারা টেন্ডারে আবেদন করেছিলো এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নির্দেশনা আছে যে, প্রয়োজনীয় ওষুধ যদি সঠিক মানে দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া যায় তাহলে আর বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে নেওয়া যাবে না। তাই আমরা এনওসি দিইনি। এক পর্যায়ে ওই কোম্পানি মামলা করে। এখন ওই কোম্পানির ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আমাদের ল্যাব টেস্টের কার্যক্রম চলছে। ’
গত ১৯ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, মামলা করে মানহীন এসব ক্যাপসুল কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল।
গত ডিসেম্বরে দেশজুড়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা, জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর দু’বার ৬-১১ মাস বয়সী শিশুশের ‘নীল’ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ‘লাল’ রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।
মূলত রাতকানা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ১৯৯৪ সাল থেকে দেশজুড়ে এ ক্যাম্পেইন চলছে। এবার সারাদেশে প্রায় আড়াই কোটি শিশুকে এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমএএম/এমএ