অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের এই সমমানের পদের অনেক আগেই মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন বৈষম্য মেনে নিতে চাইছেন না স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা।
ডিপ্লোমা পাস করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেসব চাকরি রয়েছে, সেসব পদে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ১০ম ও ৯ম গ্রেডে (পূর্বের দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণি) উন্নীত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স, জুনিয়র হেলথ এডুকেশন অফিসার, সাব-রেজিস্ট্রার পদ। কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ পদমর্যাদা বৃদ্ধি হয়েছে। এসব পদধারীরা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করে এসব পদে চাকরি পেয়েছেন।
অন্যান্য ডিপ্লোমাধারীদের মতো স্যানিটারি ইন্সপেক্টররাও উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর তিন বছর মেয়াদী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরশিপ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করে এ পদে কাজের সুযোগ পান। শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও অধিকতর গুরত্বপূর্ণ কাজ করেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা। সেই সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর খাদ্যমান ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের কাজে মূলত স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে, উপজেলা ভিত্তিক খাদ্য স্থাপনা পরিদর্শন, দৈনন্দিন রিপোর্ট প্রদান, খাদ্য নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে প্রেরণ, নমুনা ভেজাল হলে আদালতে মামলা দায়ের, পচা-বাঁসি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য জব্দ ও ধ্বংস করা, সংক্রামক রোগের কারণ অনুসন্ধান, স্কুল ও কমিউনিটিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ সংরক্ষণ ও কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ, মোবাইল কোর্ট প্রসিকিউটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন ইত্যাদি অন্যতম।
এরকম গুরুত্বপূর্ণ কাজের খাতিরে ইতিপূর্বে স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা তাদের পদমর্যাদা উন্নীতকরণের জোরালো দাবি জানান। বিষয়টির গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশসন মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত ফাইল পাঠায় এবং ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় তৃতীয় শ্রেণির স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা দিতে সম্মতি জানায়। নিয়মমাফিক এরপর একই বছরের ৩ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে আরেকটি চিঠি পাঠায় সম্মতি চেয়ে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সম্মতি আজও মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. সুলতান আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বিভাগের আমাদের সমমর্যাদার চাকরিজীবীরা ইতোমধ্যে ওপরের ধাপে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আমরা আগের অবস্থানেই রয়ে গেছি। অথচ আমরা রাষ্ট্রের দুটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের ৯ম গ্রেডে এবং অন্যান্য স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের ১০ গ্রেডে উন্নীত করলে মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। তাতে দেশই উপকৃত হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, এ বিষয়টি তার জানা নেই। যেহেতু এ দায়িত্বে তিনি অনেকটা নতুন, তাই সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছেন না। তবে এ বিষয়ে নজর দেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদটি ‘দি বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট -১৮৮৪’ অনুসারে প্রথমে জেলা বোর্ডের অধীনে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭৩ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পদটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত করা হয়। আবার ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে কয়েক ধাপে ৫৭১ জন স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমানে তারা স্বাস্থ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ থেকে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
এমএএম/এমজেএফ