শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রায় আড়াই কোটি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৯ জানুয়ারি সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন করার কথা থাকলেও দেশের কোনো কোনো এলাকায় বয়াম খোলার পর ক্যাপসুলের জিলেটিন (বাইরের খোলস) একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে থাকার তথ্য আসে। যদিও শিশুদের ক্যাপসুলের ভেতরের অংশ খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়। ওই ওষুধ ভারত থেকে আমদানি করা ছিল।
নতুন তারিখ ঘোষণা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬-১১ মাস বয়সী প্রায় ২৫ লাখ ৪৭ হাজার শিশুকে একটি করে নীল রঙের এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী এক কোটি ৯৫ লাখ সাত হাজার শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ালে রাতকানা রোগ থেকে শিশুদের মুক্তির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৃত্যুহার হ্রাস, স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা নিশ্চিত এবং ডায়রিয়ার ব্যপ্তিকাল ও হামের জটিলতা কমায়।
বছরে দু’বার ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ালে অন্ধত্ব রোধ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও শিশুর মৃত্যুহার ২৪ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রী।
শিশুদের ভরাপেটে ক্যাপসুল খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই ক্যাম্পেইন নিয়ে কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না।
আগের ক্যাম্পেইন স্থগিত হওয়ার পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আছে। তদন্তে যে দোষী হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হবে।
ক্যাপসুল সরবরাহ দেরি হওয়ার কারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আদালতে একটি রিট হয়েছিল, সেজন্য দেড় বছর দেরি হয়েছে। এই সময়ে স্টোরে পড়েছিল।
‘আমরা আমাদের শিশুদের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে পারবো না। আমরা সেই ঝুঁকি নেইনি এবং রিপোর্টে যাই আসুক আমরা ঝুঁকি নেবো না। কোনো ব্যক্তি অন্যায় করে থাকলে তার ব্যবস্থা হবে। যে ক্যাপসুল নিয়ে সন্দেহ হয়েছে সেই ক্যাপসুল দিয়ে আমরা ক্যাম্পেইন করবো না। আমাদের স্টোরে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাপসুল আছে, সেটা দিয়ে ক্যাম্পেইন চালানো হবে। ’
মন্ত্রী জানান, এখন যেটা স্টোরে আছে সেটা সাপ্লাই হয়েছে মাত্র দুই-তিন মাস আগে। সেটা আমরা দেখেছি, পরীক্ষা করেছি। নিশ্চিত হয়েই দিচ্ছি। স্টোরের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখন খুব উন্নতমানের ওষুধ তৈরি করে এবং ১৪৫টি দেশে রফতানি করে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে দেশ এতো ওষুধ উৎপাদন ও রফতানি করে, আমরা সেই লোকাল (দেশীয়) ওষুধ দিয়েই ক্যাম্পেইন করবো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হবে। যে কোনো ধরনের সন্দেহে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়া থেকে যেন কেউ বিরত না থাকে সে বিষয়ে সহযোগিতা চাই।
‘যে ভিটামিন ‘এ’ এখন আমরা ব্যবহার করছি সেটা পুনঃপরীক্ষা করেছি। যখন গ্রহণ করি তখন পরীক্ষা করা হয়েছিল। পুরনো ভিটামিন ‘এ’ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছিল সেই বিতর্কের পরে আবার আমরা পুনঃপরীক্ষা করেছি। কাজেই নতুন যেটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি মান উত্তীর্ণ এবং এটা খেলে শিশুদের কোনো ক্ষতি হবে না। এটি নিশ্চিত করতে চাই। ’
মহাপরিচালক বলেন, আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। সেজন্য পরীক্ষা না করে গ্রহণ করা ঠিক হবে না। পুরনো ক্যাপসুল দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষা করা হবে। যে প্রতিষ্ঠান এগুলো সরবরাহ করেছে তারা ২০১৬ সালে তৈরি করেছে। আর মাত্র দুই মাস আগে এগুলো রিসিভ করা হয়।
ক্যাম্পেইনের সময়ের হেরফেরের কারণে শিশুদের বয়সে যে হেরফের হয়েছে তাতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ালে কোনো সমস্যা হবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। কিন্তু উন্নত দেশে এই ক্যাম্পেইন হয় না। আমাদের দেশেও এমন পর্যায় চলে আসছে যে ক্যাম্পেইন প্রয়োজন হবে না। এই ২০ দিনে কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ