নিয়োগ প্রত্যাশীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে ৬৩৭ ও ৬২৭টি শূন্য পদে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি নেই।
এ নিয়ে আগামী ১২ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘স্বাধীনতা বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠন।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ৬৩৭টি শূন্য পদে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে অধিদফতর। সে সময় কারিগরি বোর্ডের ফার্মাটেক ছাত্রদের রিটের কারণে আইনি জটিলতায় আটকে যায় নিয়োগের প্রক্রিয়া।
যদিও এ আইনি জটিলতা থেকে বের হয়ে আসে একই স্মারকে অন্যান্য পদে (ভিন্ন যোগ্যতার) নিয়োগ প্রক্রিয়া। এরপর ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর পুনরায় শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের জন্য ৬২৭টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু আজ অবধি নিয়োগের কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে অধিদফতরের একাধিক সূত্র।
সূত্রে জানা গেছে, অধিদফতরের সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ শূন্য পদ রয়েছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নন-ফার্মাসিস্ট ও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারী দিয়েই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এক্ষেত্রে ফার্মাসিস্ট থাকলে চিকিৎসাসেবার মান আরো উন্নত বা রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকটা কমানো সম্ভব হত। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত রোগের হার অনেকাংশে হ্রাস পেত; যা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও রয়েছে।
এদিকে বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের অভিযোগ, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবের কাছে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আবেদন করেছে বেকার ডিপ্লোমাধারী ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্টরা।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে আবেদন জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। চাকরি না পেয়ে তারা হতাশ। অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা দরকার।
এ বিষয়ে স্বাধীনতা বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব রাশেদুল ইসলান বাংলানিউজকে বলেন, একই স্মারকে থাকার কারণে মামলায় আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যায়। নিয়োগ বিধি অনুসারে আমরাই সঠিকভাবে নিয়োগ পাই। কিন্তু এ মামলার বেড়াজাল থেকে মুক্তি না পাওয়ায় আমাদের কোনো গতি হচ্ছে না।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, পড়াশোনা করে ওষুধের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই আমাদের। কয়েকটা হাসপাতালে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট কর্মরত থাকলেও তাদের সংখ্যা খুব কম। এ নিয়োগে কোনো জটিলতা নেই, হাইকোর্ট আদেশও আমাদের পক্ষে। আমরা দ্রুত এ নিয়োগ বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
এদিকে সরকারি গেজেট অনুসারে ফার্মাসিস্টদের জন্য ফার্মেসি কাউন্সিলের সনদপত্র আবশ্যক। তবে ফার্মেসি কাউন্সিল বলছে, ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডে ফার্মাসিস্ট সনদপত্র না থাকলেও আবেদন করলে যে স্লিপ দেয়া হয় সেটাই সনদপত্র সমমানের হবে। তাই জটিলতা থাকার কথা নয়।
এছাড়া দেশের ১২টি সরকারি ও ৪১টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করলে ফার্মেসি অনুষদের সনদপত্র পাওয়া যায়। গেজেট অনুসারেও এটাই নিয়ম। তাই তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা থাকতে পারে না।
বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক অনন্ত কিশোর সরকার বলেন, স্বাস্থ্যখাতে ফার্মাসিস্টদের মোট পদের ৬০ শতাংশ শূন্য। এতে স্বাস্থ্যখাতের যথাযথ উন্নতি না হচ্ছে না। দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা এ নিয়োগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
‘সব বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমরা আন্দোলনে নামছি। মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচিতে যাবো। দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। ’
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমিন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। তবে নিয়োগে এখনও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেটি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
এমএএম/এসএইচ/এমএ