ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পরিবেশ বিপর্যয়ে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
পরিবেশ বিপর্যয়ে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ আইসিডিডিআরবি’তে বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী

ঢাকা: রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র গরম ও পানি দূষণের ফলে ব্যাপকহারে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষত কলেরা হাসপাতাল নামে খ্যাত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

চিকিৎসকদে মতে, আবহাওয়া পরিবর্তন ও অধিক উষ্ণতা এবং পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। গরমের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা, রাস্তার পাশে খোলা-বাসি খাবার খাওয়ায় ডায়রিয়ায় মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

পানিফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে খাওয়া এবং হাতসহ খাবার গ্রহণের পাত্র অর্থাৎ প্লেট, হাড়ি চামচ সবকিছু ওই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, রাজধানী ও এর আশপাশসহ দেশের ৮টি বিভাগের ৯৬টি থানায় ডায়রিয়া আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১৭টি জেলার হিসাব অনুসারে আইসিডিডিআরবি সহ ১ হাজার ৯৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া গত ৭ দিনে আইসিডিডিআরবি ছাড়া ৫ হাজার ৩০৯ জন এবং গত ১ মাসে ২২ হাজার ৪০৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আর এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আইসিডিডিআরবি বাদে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশের বাকি জেলাগুলোর হিসাব অধিদফতরের কাছে নেই। থাকলে এসব সংখ্যা আরো বৃদ্ধি হবে বলেও জানা গেছে।

অধিদফতর সূত্রে আরো জানা গেছে, ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে রোগীদের সহায়তায় ১৬৪৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া এ বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানা গেছে।

এদিকে রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের ব্যাপক চাপ। এ বিষয়ে হাসপাতালটির নার্সিং অফিসার ক্যাথরিন কোস্টা বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালে আমাদের শয্যা সংখ্যা আছে মোট ৩০০। কিন্তু বর্তমানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। এ জন্য হাসপাতালের বারান্দা, কোরিডোরসহ সামনের রাস্তায় আলাদা তাবু টাঙিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে ৮০০ এর বেশি সংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী ছিল চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল ৯২৩ জন। এছাড়া ১৫ ও ১৭ এপ্রিল দুইদিনেই ৯১৮ জন করে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। আর গত ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল যথাক্রমে ৮৬০, ৮৪৯, ৭৮৬ ও ৭৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ২৭ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ২৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আইসিডিডিআরবি’তে বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীসাধারণত পানি শূন্যতার কারণে শুরুতে জ্বর ও বমিভাব এরপর পাতলা পায়খানা নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হয় উল্লেখ করে আইসিডিডিআরবির নিউট্রিশন ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র সাইন্টিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার একেবারে শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে আসে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, যে সময়ে আসছে তার ৫ মিনিট পরে আসলেই রোগীকে আর বাচানো যেত না। তাছাড়া জ্যামে পড়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীকে এখানে আনার পথে মারা গেছে বলেও জানতে পেরেছি আমরা। মূলত তাদের পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে মারাত্মকভাবে। আর যে পানি পান করছেন তা রাস্তার পাশে বা দোকানের বা হোটেলে রাখা জারের পানি হওয়ার কারণে হুমকিটা বাড়ছে। কেননা এসব পানি কোনোভাবেই বিশুদ্ধ না বলে আমরা জানি। আর রাস্তার পাশে খোলা পরিবেশে জাঙ্ক ফুড তো আছেই।

গত দুইদিন ধরে রোগীর সংখ্যা ৭০০ এর কোঠায় নেমেছে বলে প্রকোপ কমে গেছে বলে মনে করি না আমরা উল্লেখ করে ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সাধারণত বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত গরমের কারণে ডায়রিয়ায় প্রকোপ থাকে গরমের কারণে। এ সময় রোগ বাড়ে ও মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রোগী এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৯০০ পেরিয়ে গিয়েছিল। গরম না কমলে এ সংখ্যা বা তার বেশি আরো বাড়তে পারে। এখনও কম হচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে কারণ, হয়তো ছুটির দিনে মানুষজন ঢাকার বাইরে রয়েছে তাই। অন্য কোথাও চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধ বা সাবধানতার বিষয়ে ডা. মো. ইকবাল হোসেন আরো বলেন, পানি ফুটিয়ে পান করা উচিত। বাইরের খাবার ও পানি খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে। পানি ফুটানোর ক্ষেত্রে পানি ফুটতে শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১০ মিনিট পর পর্যন্ত ফুটাতে হবে। আধা ঘণ্টা ধরে হলে বেশি ভালো। ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পরিষ্কার শাড়ি ৮টা ভাজ করে পানি ছাকলেও খাবার উপযোগী হয়। এছাড়া বাজারের ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। আর ডায়রিয়া দেখা দিলেই বেশি বেশি করে স্যালাইন এবং কাচা কলার তরকারি বা ভর্তা করে খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।