উদ্বেগজনক এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বিশেষজ্ঞদের দেওয়ার পরামর্শ সরকার মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের মোট বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে পায়। অন্যান্য দেশে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট আরও বেশি থাকে, কেননা জরুরি। তাই আমরা সম্পূর্ণ বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা তো করছি, তার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যখাতেও এবার বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। রোববার (০৫ মে) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল) কমপ্লেক্সে দৈনিক কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসাও জোরদার করতে হবে। আমাদের কিছু জীর্ণশীর্ণ হাসপাতালের ভবন রয়েছে। সেগুলো পুনঃনির্মাণ করে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের হাসপাতালসহ পুরো দেশের স্বাস্থ্যখাতে জনবল বাড়ানোর কাজ চলছে।
মানুষকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের বিষয়টি অনেকদিন ধরে অবহেলিত ছিল। ইদানীং নজরদারি বেড়েছে। আবার এ সেক্টরে প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন সুদক্ষ নির্দেশনার মাধ্যমে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। কেননা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়নও সম্ভব নয়। আবার এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা নিরসন করা অত্যন্ত জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে মন্ত্রী আরও বলেন, সামজিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আগে বা বর্তমানে গ্রামে একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে মানুষের পারিবারিক আলাদা সম্মানের জায়গা ছিল। এখন শহরাঞ্চলে একক পরিবার হওয়ার কারণে এই সম্মানের ক্ষেত্রে ঘাটতি পড়েছে, ফলে এই পরিবর্তন নিতে মানুষের ভালো মানসিক চাপ যাচ্ছে। তাছাড়া এই সম্মান না থাকার কারণে বিষাদগ্রস্ততার দরুণ দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের মতো ঘৃণ্যতম কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
দেশে তদবির সংস্কৃতি গড়ে উঠছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কাজে তদবিরের ফলে মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যাতে হীনমন্যতা বাড়ে। কেননা এতে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজের সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়, বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। শিক্ষকরা ছাত্রদের অতিরিক্ত শাসন করার ফলেও মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়। এসব কারণে আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ ধর্ষণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে।
এসব সমস্যা সমাধানে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আইন জোরদার করা ছাড়াও বিচার ব্যবস্থাকে আরও বেশি গতিশীল করতে হবে। সমস্যার গোঁড়া খুঁজে সমাধানে নামতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। মানুষকে সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। কেননা মাদক ছাড়াও শিশুরা ইন্টারনেট আসক্ত হচ্ছে। আরও যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে আইনের পাশাপাশি নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজেবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম রব্বানী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ অধ্যাপক মেহতাব খানম, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেঘলা সরকার, বিএসএমএমইউ’র মনোরোগবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. নাহিদ মেহজাবিন মোরশেদ, অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র কনসাল্ট্যান্ট ডা. নিগার সুলতানা, সিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আসাদুজ্জামান, ইনসেপটা ফার্মার বিপণন বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান, ওরিয়ন ফার্মার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আরিফ হোসেন, এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৯
এমএএম/এএটি/এইচএ/
** দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত