তবে এই সংখ্যা অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সংখ্যাটিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মেজার ইভালুয়েশন, মামনি এইচএসএস প্রজেক্ট ও ফিস্টুলা কেয়ার প্লাসের পরিচালিত একটি জরিপ অনুসারে।
জরিপে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার জন বিবাহিত নারীদের ৪২ দশমিক জন ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নারী নতুন করে ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরও বলছে, মানসম্মত তথ্যের অভাবে বাংলাদেশের জন্য সঠিক ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বলা সহজ নয়। তবে মাতৃ মৃত্যুরোধ, নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও দেশে এখনও ৫৩ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হচ্ছে। বাড়িতে প্রসব এর একটি ক্ষুদ্র অংশ কেবলমাত্র দক্ষ প্রসূতি সেবাদানকারীদের সহায়তা পায়। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাড়িতে প্রসবের এই উচ্চ হারের কারণে অনেক নারী প্রসবকালীন জটিলতা যেমন বিলম্বিত বাধাগ্রস্ত প্রসব ও প্রসবজনিত ফিস্টুলা ঝুঁকিতে থাকেন।
চিকিৎসকদের মতে, প্রসবজনিত ফিস্টুলা হচ্ছে নারীদের প্রসবকালীন একটি অন্যতম গুরুতর জটিলতা ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। বাধাগ্রস্ত প্রসবের ক্ষেত্রে সময় মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে প্রসবের রাস্তায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো সব পথের সঙ্গে মূত্রপথ বা মলাশয়ের একটি অস্বাভাবিক সংযোগ তৈরি হয়। ফলে নারীদের অনবরত মূত্রমল ঝরতে থাকে, যা দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে নারীরা বিষণ্ণতায় ভোগেন। ফলে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। নারীদের জননেন্দ্রিয়ের ফিস্টুলার আরও কিছু কারণ আছে। অস্ত্রোপচরের আঘাত, যৌন সহিংসতা, সড়ক দুর্ঘটনা, জন্মগত ত্রুটি, ক্যান্সার এবং সংক্রমণসহ ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত শারীরিক আঘাত। সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে ফিস্টুলার কারণে যেসব দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রস্রাব ও পায়খানা ধরে রাখতে না পারা, বারবার মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, স্নায়ুবিক ক্ষতি (ফুট ড্রপ ও হাটার সমস্যা), ক্রমাগত প্রস্রাব ক্ষরণের ফলে চামড়ায় ক্ষত ইত্যাদি। এছাড়া কিডনিতে পাথর, ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাবের ফলে নিদ্রাহীনতা অবসন্নতা দেখা দিতে পারে বলেও জানান চিকিৎসকরা।
ফিস্টুলায় আক্রান্ত হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে সম্প্রতি সুস্থ হয়েছেন রংপুরের রওশন আরা বেগম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম সন্তান জন্মদানের সময় আমার ফিস্টুলা হয়। তখন আমার প্রসব বাড়িতেই হয়েছিল। কোনো ধরনের যত্ন ছাড়াই প্রসব হওয়ার ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত হই। টানা এক বছর এই রোগে ভুগেছি। পরে অপারেশন করে সুস্থ হয়েছি। এই রোগাক্রান্ত থাকা অবস্থায় মানুষের মাঝে যেতে পারতাম না। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতো এবং অনেক বেশি হীনমন্যতায় ভুগতাম।
হাসপাতালে গর্ভপাত নিশ্চিত করার পরামর্শ দেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেকোনো মূল্যেই আমাদের হাসপাতলে প্রসবের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের লক্ষ্য অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা দূর হবে না। সারাদেশে বর্তমানে আনুমানিক প্রায় ১ হাজার ৬শ প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ২৪০ জন ইউরোলজিস্ট আছেন।
এটি অনুমান করা হয় যে, ১০৮ জন প্রশিক্ষিত ফিস্টুলা সার্জনদের মধ্যে ৬৮ জন দেশে রয়েছেন। এদের মধ্যে গুটি কয়েকজন সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। আবার তাদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জন মূলত বেশিরভাগ অপারেশনগুলো করে থাকেন। বর্তমানে দেশে ৬শ থেকে ৭শ ফিস্টুলা রোগের অপারেশন করা হচ্ছে। কিন্তু বাকি চিকিৎসকরা এগিয়ে এলে ফিস্টুলা রোগ এখনই নির্মূল করা সম্ভব। বাংলাদেশ অপারেশনজনিত ফিস্টুলা খুব দ্রুত বাড়ছে। যা বর্তমানে ফিস্টুলার ২৪ থেকে ৪০ শতাংশ।
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
এমন অবস্থায় প্রসবজনিত ফিস্টুলা নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৌশলপত্রটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ) ডা. মো শামসুল হক, একই বিভাগের উপ-পরিচালক ও মেটারনাল হেলথের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মোশায়ের-উল-ইসলাম, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার, ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. আসা টর্কেলসন, ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর জেইনা সালাহি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
এমএএম/এএটি