বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বাংলাদেশের সাত ভাগ জনগণই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। সব মিলিয়ে দেশে এক কোটি ১০ লাখ থ্যালাসেমিয়া বাহক রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৩৩ শিশুই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এদের চিকিৎসায় আগামী অর্থ বছরে বাজেট নির্ধারণের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে চলতি বছরে দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে ছয় কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগটি নিয়ন্ত্রণ এমনকি নির্মূল করাও সম্ভব। কেননা রোগটি প্রকট আকার ধারণ করেনি। তাই ব্যাপক জনসচেতনতা অর্জন করার পাশাপাশি বিনামূল্যে রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বা এ অর্থ বছরে বিনামূল্যে ওষুধের জন্য নির্ধারিত বাজেট থেকে ছয় কোটি টাকা থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ সরবরাহের কাজে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী অর্থ বছরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা (ব্লাড ট্রান্সফিউশন), ওষুধ সরবরাহ ও রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং রিএজেন্ট (প্রয়োজনীয় ক্যামিকেল) সরবরাহ করা হবে। তবে শুরুতে এ কার্যক্রম শুধুমাত্র দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিচালিত হবে।
বর্তমানে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর দরিদ্র বাবা-মাকে।
কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা বেসরকারি কোম্পানীতে কর্মরত মো. নেসার উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিমাসে আগে একবার করে আসা লাগতো। এখন দুইবার আসা লাগে। আমার বেতনের টাকা দিয়ে এ খরচ পোষানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখন থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতা পাই।
এ রোগে আক্রান্ত দরিদ্রদের চিকিৎসার কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির এই সেবামূলক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হয় রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অবস্থিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
হাসপাতালটির কনসালট্যান্ট ডা. এ কে এম একরামুল হোসাইন স্বপন বাংলানিউজকে জানান, গত বছর যাকাতের অর্থ দিয়ে আমরা ৪০৮ জন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসায় মূলত শিশুকে রক্ত দেওয়া লাগে। কারণ এ রোগে আক্রান্তদের রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তাই অনেকের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে দুইবারও রক্ত দিতে হয়। আর প্রতিবার রক্ত দিতে সর্বনিম্ন এক হাজার ১০০ টাকা খরচ হয়। দরিদ্রদের জন্য এটাও অনেক টাকা। আমরা যাকাতের যে পরিমাণ অর্থ পাই, সে অর্থই এ কাজে ব্যবহার করি। এছাড়া আমরা দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে সেবাও দিয়ে থাকি। গত বছর আমরা প্রায় ২০০ শিশুকে এ সেবা দিয়েছি।
যাকাতের অর্থ পাঠানোর পদ্ধতি সম্পর্কে হাসপাতালটির অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. আহমেদ আবিদ বলেন, অনলাইনে ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের (www.thals.org/zakat) ‘Donate’ অপশনে গিয়ে যে কেউ যাকাত সহায়তা দিতে পারবে। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নং- ১০০৭২৭৬২৯৩০০১ (আইএফআইসি ব্যাংক, শান্তিনগর শাখা, ঢাকা) ও বিকাশের (01729284257) মাধ্যমেও যাকাতের অর্থ পাঠানো যাবে। এক্ষেত্রে বিকাশ মেন্যুতে ‘Payment’ অপশনে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
এমএএম/এসএ