সোমবার (২৪ জুন) বিনামূল্যে সিরাজুল ইসলাম (২০) নামের এক যুবকের লিভার (যকৃত অথবা বহুল প্রচলিত কলিজা) প্রতিস্থাপন করেন তারা।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমানের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম এ ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় এটি একটি নতুন মাইলফলক। এরআগে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) হয়েছে। আগে হার্টের চিকিৎসা করতেও দেশের বাইরে যেতে হতো। এখন তা অনেক কমেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থার কথা বলা ছিলো। তা বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসবের খোঁজ নেন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাত উন্নত হওয়ায় আমাদের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। দেশের প্রয়োজনে ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন করা হয় ও দেশের বাইরে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জিএম. সালেহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম আখতারুজ্জামান, ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. পি বালাচন্দ্র মেনন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের লিভারের বিভিন্ন রোগের সমস্যা একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি কোনো রোগীর লিভার সিরোসিস হয়ে যায়, তাহলে তার একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। এ চিকিৎসাটি বাংলাদেশে করতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়, বিদেশে কোটি টাকা খরচ হয়। এচেয়ে আরও বড় কথা দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যাদের টাকা আছে এরকম পাঁচ শতাধিক রোগী প্রতি বছর বিদেশে গিয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে থাকেন। আর যারা পারেন না তারা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুকে মেনে নিতে বাধ্য হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্ৰধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের মাধ্যমে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সহায়তা নিয়ে দেশেই সাশ্রয়ী ব্যয়ে বা স্বল্প খরচে দেশের রোগীদের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সফলভাবে সোমবার থেকে এ চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আরও জানানো হয়, এটা পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সফল। কোনো সমস্যা নেই। এর আগে দেশে মোট ৪টা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। এরমধ্যে দুইটি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে এবং বাকি দুইটি বারডেম জেনারেল হাসপাতালে হয়েছে। সেখানে সফলতা ছিলো ৫০ শতাংশ। তবে, তার তুলনায় এক্ষেত্রে সফলতা বেশি। দেশে বেসরকারি হাসপাতালে যে খরচে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় তার চেয়ে অর্ধেক খরচে করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৯
এমএএম/ওএইচ/