সোমবার (০১ জুলাই) ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকাণ্ড হিসেবে রাজধানীর মিরপুর, গুলশান এবং গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে আলাদাভাবে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মিরপুরে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, গুলশানে পরিচালক নায়ার সুলতানা এবং গাজীপুরে সহকারী পরিচালক মো. আকতার হোসেন।
মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ফার্মেসি ব্যবস্থাপনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের লক্ষ্য তিনটি। সেগুলো হচ্ছে- জনসচেতনতা বাড়ানো, ঔষধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রচলিত ঔষধ আইনের প্রয়োগ। তবে শুধু আইনের প্রয়োগ করলেই চলবেনা, জনসচেনতাও বাড়াতে হবে। । নকল ও আনরেজিস্টার্ড ঔষধ কিভাবে চেনা যাবে, ফার্মেসি ব্যবস্থাপনা কিভাবে করতে হবে, ফার্মেসিতে কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ইনভয়েসের মাধ্যমে ঔষধ ক্রয় করা কেনো আবশ্যক- এসব না জেনে অনেক সময় ফার্মেসির মালিক কিংবা ফার্মাসিস্টরা অপরাধ করে থাকেন। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ প্রতিরোধ করে বাংলাদেশের ফার্মেসি ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই।
এসময় মহাপরিচালক মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধের ব্যাপারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সচেতন হতে বলেন। তিনি জনসাধারণকে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে ঔষধ ক্রয় এবং ঔষধের সঙ্গে নিবন্ধন আছে কিনা অর্থাৎ ঔষধের মোড়কে ডিএআর (DAR) বা এমএ (MA) নম্বর আছে কিনা তা দেখে ক্রয় করার অনুরোধ করেন।
এছাড়া অন্য সভাগুলোতে বক্তারা বলেন, বিক্রয়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ফার্মেসির সেলফ, ড্রয়ার কিংবা রেফ্রিজারেটর অথবা ফার্মেসির অন্য কোথাও পাওয়া গেলে সেগুলো জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ আলাদা কন্টেইনারে লাল কালি দিয়ে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, বিক্রির জন্য নয়’- এটি লিখে সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুতই সেগুলো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। এ বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া গেলে ফার্মেসিটি সিলগালা করে বন্ধ করাসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা পর্যন্ত নেওয়া হবে পারে।
‘প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ফার্মেসি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফার্মেসি পরিদর্শনে আসবেন। সে সময় ফার্মেসিতে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া গেলে আলাদা কন্টেইনারে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, বিক্রির জন্য নয়’ লাল কালি দিয়ে এ কথা লিখে সংরক্ষণ করতে হবে। এবং এই বিষয়ে রেকর্ডও সংরক্ষণ করতে হবে। ’
এছাড়াও বক্তারা এফইএফও (FEFO-First Expiry First Out) পদ্ধতি ঔষধ ব্যবস্থাপনায় অনুসরণের নিমিত্তে কম্পিউটার বা আইটিভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ সনাক্তকরণের পরামর্শ দেন।
বক্তারা আরও বলেন, ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ও ফার্মাসিস্টবিহীন ফার্মেসি ব্যবসা আর পরিচালনা করা যাবে না। ফার্মেসিতে আইনতভাবে ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এছাড়া আনরেজিস্টার্ড, নকল, ভেজাল, মিসব্র্যান্ডেড ও কাউন্টারফেইট ঔষধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, সরকারি ঔষধ, রোগ নিরাময় করে এমন ফুড সাপ্লিমেন্ট ফার্মেসিতে মজুদ ও বিক্রয় করা যাবে না। নকল, ভেজাল ও আনরেজিস্টার্ড ঔষধ বিক্রয় বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওটিসি (OTC- Over the Counter Drugs) ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য কোনো ঔষধ বিক্রি করা যাবে না।
এছাড়া সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কিংবা নির্দেশক মূল্যের চাইতে অধিক মূল্যে ঔষধ বিক্রয় করা যাবে না। ঔষধ ক্রয়-বিক্রয়ের ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করতে হবে। ঔষধ বৈধ সোর্স হতে ইনভয়েসের মাধ্যমে কিনতে হবে। এছাড়া তাপ সংবেদনশীল ঔষধগুলো ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য সব ঔষধই নির্দেশিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমএএম/এসএ