ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর উপকণ্ঠে মাতুয়াইলের সরকারি হাসপাতাল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে।
বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, স্ত্রীর জরায়ুর চিকিৎসা করাতে প্রায় ১৫ দিন আগে কুমিল্লা থেকে মাতুয়াইল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আসেন আলমগীর হোসেন। হাসপাতালে ভর্তির পর স্বাভাবিক নিয়মেই চিকিৎসা শুরু হয়। পরে, স্ত্রীর অপারেশন করাতে হবে, আর সেটা ভালোভাবে করাতে হলে টাকা দিতে হবে জানিয়ে তার কাছ থেকে আট হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এক চিকিৎসক। কিন্তু, ছাড়পত্রের জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে বলা হলেই বাধে বিপত্তি। তখন চিকিৎসকের টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তা হাসপাতালের পরিচালক পর্যন্ত গড়ায়। আলমগীর হাসপাতাল পরিচালকের কাছে সমস্ত ঘটনার বিবরণ দেন।
হাসপাতালের অপারেশনের রেজিস্ট্রার খাতায় দেখা গেছে, ইউনিট-আইতে ভর্তি করা ওই রোগীর নাম শাহনাজ আক্তার, বয়স ২৬, বেড নম্বর বি-৮। সার্জন হিসেবে রয়েছেন ডা. শারমিন আক্তার লিজা, অবেদনিক ছিলেন ডা. আনাম ও সহকারী ডা. হুমায়রা, ডা. নাজনিন, ডা. বিথি। অপারেশনের নাম লেখা হয়েছে: ডায়াগনস্টিক লেপারেস্কোপি ইন্ডেকেটিশন- প্রাইমারি সাব ফার্টিলিটি।
রোগীর স্বামী আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, টাকা-পয়সা ধার করে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে আসি। আমাকে জানানো হয়েছিল, এখানে ভালো চিকিৎসা হয়। আমরা ছয়-সাত বছর ধরে ভুক্তভোগী, শুধু টাকার অভাবে আসতে পারিনি। আসার আগে কুমিল্লায় আমাকে বলা হয়েছে, অপারেশন করতে হবে। বলেছি, টাকা খরচ হোক, সমস্যা নাই। অপারেশন করা লাগলে করাবো। তখন আমাকে এখানে আসার পরামর্শ দেয় ও টাকার কথা জানায়।
‘আমাকে বলা হয়েছিল, সরকার তো হাসপাতালে সবকিছু সরবারহ করে না, তাই সেগুলো কিনতে আট হাজার টাকা দিতে হবে। আর সব মিলায়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর, এখানে আসার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, টাকা আনছি কি-না? আমি আনছি বলার পর উনার রুমে (আউটডোর, নিচতলায় ১৬৫ নম্বর রুম) যেতে বলেন। গত সোমবার (৭ জুলাই) অপারেশন হয়। ডা. লিজা নিজ হাতে টাকাটা নিয়েছিলেন। কোনো রশিদ দেননি। এমনকি, আমাদের বলা হয়েছিল, এ টাকার কথা কাউকে বলবেন না। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। অপারেশনের পর ডাক্তারকে আর খুঁজে পাইনি। নার্সকে বলছি। নার্স বলছে, টাকা জমা দেন, রিলিজ আগামীকাল হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, এ হাসপাতালে ডাক্তারদের একটি চক্র রয়েছে, যারা প্রতিনিয়তই রোগীদের বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে থাকে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেন। কেউ কেউ এভাবে রোগীদের বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। হাসপাতাল প্রশাসন এসব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এম মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এমএএম/এইচএডি