ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সচেতন হোন, হেপাটাইটিস হটান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
সচেতন হোন, হেপাটাইটিস হটান প্রতীকী ছবি

আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। হেপাটাইটিস বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে জন্ডিসের কথা। কিন্তু শুধু জন্ডিস নয়, ভাইরাসঘটিত এই রোগ লিভার সিরোসিসসহ লিভার ক্যান্সারের মতো জটিলতা তৈরির মাধ্যমে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন লোক এবং বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি লোক হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু আশঙ্কার বিষয়, এদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না যে নিজের অজান্তেই তিনি হেপাটাইটিস বহন করে চলেছেন এবং আশপাশের মানুষকে সংক্রমিত করছেন। তাই তো এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন খুঁজি লক্ষ অজানা রোগীদের’। তবে আশার কথা, দৈনন্দিন জীবনের একটু বাড়তি সচেতনতাই রুখে দিতে পারে হেপাটাইটিসের মত ঘাতক ব্যাধির বিস্তার।

টিকা গ্রহণে আর দেরি নয়
যাদের হেপাটাইটিস এর টিকা গ্রহণ করা নেই তাদের অতিসত্বর ডাক্তারের কাছে যোগাযোগ করে রক্ত পরীক্ষা পূর্বক হেপাটাইটিসের টিকা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে টিকা গ্রহণে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে টিকা দারুণ কার্যকর, এছাড়া হেপাটাইটিস এ এবং ই প্রতিরোধী টিকাও রয়েছে।

হাত ধোয়াকে গুরুত্ব দিন
হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস শরীরের বাইরে প্রায় একমাস কার্যকরী অবস্থায় থাকতে পারে এবং মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই খাবার ও পানীয় খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং বাথরুম ব্যবহারের পর যথাযথ নিয়মে সাবান ব্যবহার করে হাত ধুতে কখনোই ভুলবেন না ।

বাইরের খাবার ও পানীয় গ্রহণে সচেতন হোন
রাস্তাঘাটে বা খোলা জায়গায়সহ অন্যান্য স্থানে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই ভালো। দূষিত পানিতে হেপাটাইটিসের জীবাণু পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। সুতরাং বিশেষ করে পানি বা অন্যান্য পানীয় পানের পূর্বে সচেতন হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে নিজের বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ পানি নিজে বহন করা ভালো এবং খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া দরকার।

পরীক্ষা ছাড়া রক্ত গ্রহণ কে না বলুন
রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা রক্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ রক্তের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।  এজন্য সবসময় পরিচিত মানুষের রক্ত গ্রহণ করাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং রক্ত গ্রহণের পূর্বে হেপাটাইটিসসহ আরও কয়েকটি রক্ত-বাহিত রোগের পরীক্ষার রুটিনমাফিক পরীক্ষা করা হয়-এসব ক্ষেত্রে সচেতন হোন।

নিরাপদ যৌনাচার
বহুগামিতা থেকে নিজেদের বিরত রাখুন এবং নিরাপদ যৌন-চর্চার জন্য মাধ্যম হিসেবে শুধু কনডম ব্যবহার করে হেপাটাইটিস বি এবং সি-সহ আরও কয়েকটি যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

নবজাতকের টিকা
গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস থাকলে নবজাতকেরও হেপাটাইটিস সংক্রমণ হতে পারে। এজন্য সবক্ষেত্রে নবজাতক ভূমিষ্ট হওয়ার পর যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নবজাতকের জন্য টিকা বা অন্যান্য ব্যবস্থা নিন।

সিরিঞ্জের পুন:ব্যবহার রোধ করুন
সিরিঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধু একবার ব্যবহার করার পর সেগুলোকে ফেলে দিন। এগুলোর বারংবার ব্যবহার হেপাটাইটিসের সংক্রমণ ঘটায়। তাছাড়া সব ধরনের সুঁচ বা ধারালো চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করা উচিত, নতুবা এগুলো অন্য কারও ক্ষেত্রে রোগ ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

নিজের ব্যবহৃত দ্রব্য অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকুন
নিজের ব্যবহৃত দ্রব্য যেমন শেভিং রেজার, ব্লেড, কেঁচি বা অন্যান্য যেসব জিনিসগুলোতে নিজের সামান্য পরিমাণ রক্তের সংস্পর্শের সম্ভাবনা রয়েছে সেসব দ্রব্য অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকা উত্তম, নতুবা এগুলোর মাধ্যমে আপনার অজান্তেই একজন থেকে অন্য জনের শরীরে হেপাটাইটিস ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

লেখক
ডা. অভিষেক ভদ্র
জেনারেল ফিজিশিয়ান

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।