মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) একদিনে বরিশাল জেলায় তিন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর এখন পর্যন্ত ১৭৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই সর্বত্র ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করতে শুরু করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে ডেঙ্গু নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। রাজধানী ছেড়ে মানুষ গ্রামে ফেরার পর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর চাপ এ অঞ্চলে বাড়তে পাড়ে বলে আশংকা করছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ স্থানীয়রা। যদিও গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, যা অনেকটা ঢাকার বাইরে না যাওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করার মতো।
যদিও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো ঈদকে টার্গেট করে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা, ওষুধ সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং ঈদের ছুটি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বরিশালের ছয় পৌরসভায় মশক নিধনে তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। যদিও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আর বিভাগের একমাত্র বরিশাল সিটি করপোরেশন নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে ক্রাশ প্রোগ্রাম করছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালায়ের উপ-পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল বাদে ৬ জেলায় এখন পর্যন্ত ৭৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যারমধ্যে পটুয়াখালী জেলায় ২৪ জন, বরিশাল জেলায় ৮ জন, ভোলা জেলায় ৯ জন, পিরোজপুর জেলায় ৮ জন, বরগুনা জেলায় ২৩ জন ও ঝালকাঠি জেলায় ৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৬ জন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে কারও মৃত্যু না হলেও চিকিৎসা নেওয়ার আগেই বরিশালের গৌরনদীতে এক নারীর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক।
অপরদিকে শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ১০১ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫১ জন রোগী, যার মধ্যে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবদুর রহিম বলেন, বর্তমানে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। এ জ্বরের কারণে শংকা বাড়ছে মানুষের মনে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বরং শুরু থেকে সচেতন থাকলে জটিলতা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এরই মধ্যে নতুন গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।
তিনি বলেন, অনিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে জ্বরের চিকিৎসা করানো যাবে না। ডেঙ্গুর মৌসুমে যেকোনো জ্বরের রোগীকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
ঈদে বরিশালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে আশংকা প্রকাশ করে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীক যাতায়াতের কারণে বরিশালেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ঈদের ছুটিতে শতভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা এরইমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
এমএস/জেডএস