এতে শ্রমিকরা তাদের অজান্তেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। পোশাক শ্রমিকরা জানেন না এডিস মশা কী, কেনো ডেঙ্গু হয় বা ডেঙ্গু হলেও এর প্রতিকারে কী করতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাভার আশুলিয়ার প্রত্যেকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা হতো তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব শ্রমিকদের ওপর বেশি একটা পড়তো না।
গত কয়েকদিনে সাভার আশুলিয়ার হাসপাতালগুলোতে প্রায় শতাধিক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ৮৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন। যার এক তৃতীয়াংশই পোশাক শ্রমিক।
রোববার (০৬ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন, এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ৫৯, আশুলিয়ায় অবস্থিত নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১ ও সাভারের সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ গণস্বাস্থ্যে ৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে এ অঞ্চলের কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন ডেঙ্গু জ্বর হয়? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ? বা এ রোগ প্রতিরোধে করণীয় কী সেটিও জানেন না তারা। সারাদিন কাজের মধ্যে থাকতে হয়। এসব জ্বর নিয়ে ভাবার সময় নেই কারখানা কর্তৃপক্ষের।
আশুলিয়ার জিরাবো থেকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসাধীন পোশাক শ্রমিক সুমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন সকাল ৭টার দিকে উঠে অফিসে যাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় আসি। দিনের বেশির ভাগ সময় কাজের মধ্যে কাটে। তাই ডেঙ্গু সম্পর্কে আমি তেমন একটা জানতাম না। হাসপাতালে এসে আমি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানতে পেরেছি৷ এ জ্বর নিয়ে আমাদের কারখানায় যদি সচেতনতামূলক কিছু করা হতো বা জানিয়ে দিতো ডেঙ্গু কি? কীভাবে তা হয়? তাহলে আমাকে আর হয়তো আজ ডেঙ্গু রোগে ভুগতে হতো না।
কথা হয় এনভয় পোশাক কারখানার শ্রমিক রহিমার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার পাশের মানুষদের কাছে শুনছি ডেঙ্গু রোগ খুব খারাপ, এটি হলে মানুষ মারা যায়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগ কেনো হয় বা এটি হলে কি করবো সেটা জানি না৷ কারখানার মালিকরা যদি এ রোগ সম্পর্কে আমাদের সবাইকে জানাতেন তাহলে আমরা সবাই সচেতন হয়ে চলাফেরা করতাম। এছাড়া বাসায় আমাদের সন্তানরাও সুস্থ ও সুন্দরভাবে থাকতে পারতো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক পোশাক কারখানায় যদি ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা সম্পর্কে শ্রমিকদের জানানো হয়। তাহলে তারা সচেতন হতে পারবে। আমি ইতোমধ্যে কয়েকটি পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া আমাদের কর্মীরা নিজে নিজে শ্রমিকদের কলোনিতে গিয়ে শ্রমিকদের সচেতন করে আসছে। সেই সঙ্গে আমি পৌরসভা মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
আশুলিয়ায় অবস্থিত নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডেপুটি ম্যানেজার হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ২৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বেশির ভাগ রোগীই কোনো না কোনো পোশাক কারাখানায় কাজ করেন। বর্তমানে ১৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তার মধ্যে ১৪ জন রোগীই পোশাক শ্রমিক।
কেনো পোশাক শ্রমিকরাই ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হুদা মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, পোশাক শ্রমিকরা যে পরিবেশে থাকে সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক শ্রমিক অল্প দামে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এতে করে বাসার পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে ধরনের হয়। এ কারণে সেখানে এডিস মশার জন্ম হয়। মশার কামড়ে শ্রমিকরা অজান্তেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের যদি কারখানা থেকেই সচেতন করা যেত তাহলে তারা ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করতে পারতো। আমি মনে করি প্রত্যেকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতন করা উচিৎ।
নাজমুল হুদা বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার নামে একটি বিশেষ কর্নার করা হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
আরএ