তবে প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার এ তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
এবারের ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যুর হারও সর্বোচ্চ বলে জানা যায় আইইডিসিআর সূত্রে। সরকারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। যাদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
ডেঙ্গুতে নিশ্চিত মৃত ৬০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা জানান, ৬০ জনের মধ্যে ৪০ জনের ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম ও ৭ জনের হেমোরেজিক জ্বর ছিল। ২৩ জনের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া মৃতদের মধ্যে ২১ জনের বয়সই ১৮ বছরের নিচে।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩, আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসের ৯ দিনে ৬ হাজার ১৩৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে ২০১৯ সালেই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে যার মধ্যে জুলাই মাসে ছিল সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি মাসে বৃষ্টির পরিমাণ আবার বেড়েছে। তাই এডিস মশার প্রজননও আবার বেড়েছে। এক্ষেত্রে লার্ভা নষ্ট করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। নয়তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।
ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ৭১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮ টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) এই সংখ্যা ছিল ৭৬১ জন। অর্থাৎ, সারাদেশে এই সময়ে রোগী কমেছে ৪৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৬ শতাংশ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে রাজধানীর মাত্র ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৫২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। ক্রমেই এই সংখ্যা কমে আসছে। একই সময়ে ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৫৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কমছে না ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে মোট ভর্তি রয়েছে ৩ হাজার ৯১ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আর নতুন ৩শ জন ভর্তি হয়েছে ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৭০ জন এবং ঢাকার বাইরে আরো ৪১৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে, ছাড়পত্র পেয়েছে ৪৮১ জন।
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭৯, মিটফোর্ডে ৫৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৯, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৯, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ১, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ৫, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ১৩ ও কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ৩ ও নিটোরে একজনসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মোট ২২৪ জন ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন ৭৬ জন।
এদিকে ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৮৮, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪, খুলনায় ১৩৫, রংপুরে ১৩, রাজশাহীতে ৩২, বরিশালে ৬৮, সিলেটে ৭ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ৭৭ হাজার ২৩০ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র গ্রহণ করেছেন ৭৩ হাজার ৯৪২ জন। অর্থাৎ, আক্রান্তদের ৯৬ শতাংশ রোগীই ছাড়পত্র পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৯
এমএএম/এএ