ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চরাঞ্চলের প্রসূতি মায়েদের ভরসা তামাশা বুবু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
চরাঞ্চলের প্রসূতি মায়েদের ভরসা তামাশা বুবু

মানিকগঞ্জ: মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আকাঙ্খিত অনুভূতি। মাতৃত্বের জন্য নারীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হচ্ছে প্রসবকালীন সময়। প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে প্রসূতি মায়েদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়তে থাকে। একজন মা-ই (ধাত্রী) বোঝেন ওই সময় প্রসূতির সেবা কতটুকু মূল্যবান। এমনই প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে সেবা দেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ত্রিশুন্ডী গ্রামের তামাশা বুবু। তিনিই উপজেলার চরাঞ্চল আলোকদিয়া ও ত্রিশুন্ডী গ্রামের প্রসূতি মায়েদের একমাত্র ভরসা।

তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নত মান হলেও উপজেলার আলোকদিয়া ও ত্রিশুন্ডী গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়নি। এ দুই গ্রামের মানুষদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা।

প্রতিদিন জাফরগঞ্জ ও তেওতা ঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৯টা আর দুপুর ২টায় নৌকা ছেড়ে যায়। মধ্যরাতে কোনো প্রসূতি মায়ের প্রসব ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। আর তখনি বিপদের বন্ধু হিসেবে পাশে এসে দাঁড়ান দুই গ্রামের একমাত্র ভরসা তামাশা বুবু।  প্রসূতি মায়ের জন্য তিনি সবসময় প্রস্তুত থাকেন।

সরেজমিনে জানা যায়, শিবালয়ের ত্রিশুন্ডী গ্রামের আমছের আলী সরদারের স্ত্রী তামাশা বুবু। পারিবারিক জীবনে তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জননী। নিজের সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকলেও চরাঞ্চলের প্রসূতির খোঁজখবর নিতে ভোলেন না। প্রায় ৩০ বছর ধরে আলোকদিয়া ও ত্রিশুন্ডী গ্রামে বিনামূল্যে এ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রসূতি মায়েদের প্রসব-বেদনার কথা শুনলে নিজ তাগিদেই ছুটে যান সেখানে। তামাশা বুবুর বাড়ি চিনেন না চরাঞ্চলে এমন মানুষ নেই বললেই চলে। সবার বাড়িতেই তার মোবাইল নাম্বার রয়েছে।

ত্রিশুন্ডী এলাকার মোমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তামাশা বুবুর আমাগো চরের মায়েদের জন্য যা করছেন তা সারা জীবনেও ভুলতে পারবো না। চরের গরিব প্রসূতি মায়েদের ভরসার নাম তামাশা বুবু।

আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা সুলতান শেখ বলেন, রাত ২টায় আমার বৌয়ের প্রসব বেদনা ওঠে। ওই রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। তখন আমি তামাশা বুবুর কাছে ছুটে যাই। বুবু আসার কিছু পর আমার বৌ মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। তামাশা বুবু না আইলে আমার বৌ আর মেয়েরে বাঁচাইতে পারতাম না। আমি সারাজীবন তামাশা বুবুর কাছে ঋণি।

তামাশা বুবু বলেন, আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। বিয়ের পর সম্পর্কে আমার দাদি শাশুড়ি কোলসন বিবির কাছ থেকে এ কাজ শিখেছি। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত আলোকদিয়া ও ত্রিশুন্ডী চরাঞ্চলের ধাত্রীর (দাই) কাজ করছি। আমার হাতে প্রায় হাজারের বেশি প্রসূতি মা হয়েছেন। আমি এ কাজের বিনিময়ে কোনো অর্থ নেই না। তবে অনেকে খুশি হয়ে পরনের কাপড়, সাবান দেয়। চরের সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসেন।

তেওতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী বাদুরী বলেন, আমাদের গ্রামীণ সমাজে প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারিতে ধাত্রী তামাশা বুবুর মতো অনেকেই অবদান রাখছেন। তবে আলোকদিয়া ও ত্রিশুন্ডী চরাঞ্চলে এ কাজে নজির স্থাপন করেছেন তামাশা বুবু। তাকে যদি সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে আমাদের চরাঞ্চলের প্রসূতি মায়েদের জন্য অনেক ভালো হবে।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, তামাশা বুবু নামের যে ভদ্রমহিলা ধাত্রীর কাজ করছেন তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবে তার কাজ প্রশংসনীয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।