রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা সংস্থা আর্ক ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা জানান। ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তামাক বর্জন: বাস্তবতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণাটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ১৮ ভাগই ধূমপায়ী। পুরুষ রোগীদের প্রতি তিন জনে একজন ধূমপান করেন। ধূমপানের কারণে যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা দুইগুণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে যক্ষ্মা রোগীদের তামাক সেবনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সংক্ষিপ্ত কাউন্সেলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তামাক বর্জনে এই ধরনের সহায়তা পেলে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৪ হাজার যক্ষ্মারোগী তামাকের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রুহুল কুদ্দস, ক্যানসার সোসাইটির ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ডা. এমএইস চৌধুরী লেলিন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. সাইদুর রহমান বলেন, যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা নিতে যারা চিকিৎসাকেন্দ্রে আসবে, তাদের জন্য তামাক সেবন ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ছয় মাসের চিকিৎসাকালীন তাদের তামাক ছাড়ানে সম্ভব। আজ এখান থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা যক্ষ্মা রোগীদের জন্য ধূমপানসহ তামাক বর্জনে সহায়তা কর্মসূচি চালু করবো।
তিনি বলেন, যক্ষ্মা রোগীদের শতভাগ তামাকমুক্ত রাখতে হবে। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত যেসব হাসপাতাল রয়েছে সেসব হাসপাতালে এই সহায়তা কর্মসূচি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক ব্যবহার সংশ্লিষ্ট তথ্য সংযোজন এবং তামাক বর্জনে রোগীদের সহায়তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর বলেন, যক্ষা রোগীদের মধ্যে যারা তামাক ব্যবহার করে, তাদের চিকিৎসার সুবিধার্থে তাদের তামাক ব্যবহার ও তামাক বর্জনের তথ্য সংগ্রহ করে তাদেরকে বিজ্ঞানসম্মত কাউন্সেলিং দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র যক্ষা রোগীদের জন্য নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নানা ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সম্ভব। এর ফলে যেমন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজতর হবে, তেমনি রোগীদের স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগীদের তামাক ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, প্রতিবেদন এবং কাউন্সেলিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্ক ফাউন্ডেশনের এই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় দেশের চারটি জেলার যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের তামাক বর্জনের কৌশল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
পরবর্তীতে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ২৩ ভাগকে ধূমপায়ী হিসেবে শনাক্ত করে। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪০ ভাগ। এই সব রোগীদের ধূমপান বর্জনে সহায়তা করতে উক্ত স্বাস্থ্য সেবাদানকারীরা কাউন্সেলিং প্রদানে সক্ষম হয়েছেন। এথেকে প্রমাণ হয় যে রোগীদের তামাক বর্জন করাতে সংক্ষিপ্ত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা দান পদ্ধতিটি কার্যকর এবং বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়নযোগ্য। স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের খুব সহজ প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে রোগীদের তামাক বর্জনে সহায়তা করা সম্ভব। এর জন্য সরকারের রোগীপ্রতি মাত্র ৬৫ টাকা ব্যয় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
এমএএম/এসএ