বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজনন মৌসুম না থাকলেও বৃষ্টি হলে পানির উপস্থিতির কারণে এডিস মশার সংখ্যা বেড়ে গেছে, এতে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। এক্ষেত্রে মশকনিধন কর্মসূচি চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ২০৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) এই সংখ্যা ছিল ১৮৬ জন। অর্থাৎ, এই সময়ে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ১৭ জন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বাংলানিউজকে এতথ্য জানান।
তিনি বলেন, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে রাজধানীর ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৪৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। একই সময় ঢাকার বাইরে ৫১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন মোট ৯৫২ জন।
এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে নতুন ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৭ জন। ঢাকার বাইরে আরও ১১৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ও ছাড়পত্র পেয়েছে ৮০ জন।
এ বিষয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম সামশুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এবছর এডিস মশার ধরন অনুসারে শীতেও ডেঙ্গু থেকে যাবে। একেবারে শূন্য হবে না এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। অর্থাৎ, প্রজনন মৌসুমে যে লার্ভাগুলো তৈরি হয়েছে, পানির সংস্পর্শ পেলেই সেগুলো এডিস মশায় রূপ নেবে। কারণ, এডিসের লার্ভা দুই বছর পর্যন্ত পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। তাই, সরকারের সংশ্লিষ্টদের মশকনিধনসহ লার্ভা ধ্বংসের কাজ অব্যাহত না রাখলে এডিসের জন্ম ঠেকানো যাবে না, ডেঙ্গুও নির্মূল হবে না।
সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫, খুলনায় ৩৬, রংপুর ১১, রাজশাহীতে ১১, বরিশালে ২২, সিলেটে এক ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে তিন জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
একই সময়ে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১, মিটফোর্ডে ১০, ঢাকা শিশু হাসপাতালে এক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১১ জনসহ ঢাকা শহরের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মোট ৫৭ জন ভর্তি হয়েছেন। আর বেসরকারি হাসপাতালে ৩১ জনসহ মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৮৮ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩, আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন, সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ৮৫৬ জন ও অক্টোবরের ২৬ দিনে ৬ হাজার ৯১১ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে ২০১৯ সালেই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে, এর মধ্যে আগস্ট মাসে এর হার ছিল সর্বোচ্চ।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৪ হাজার ৮৬৪ জন। সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। অর্থাৎ আক্রান্তদের ৯৮ দশমিক ৭ ভাগই ছাড়পত্র পেয়েছেন।
এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪৮ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ১৭১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১০৭টি ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে, ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এপ্রিলে দুই, জুনে ছয়, জুলাইয়ে ৩৫, আগস্টে ৬০ ও সেপ্টেম্বর মাসে চারজনের মৃত্যু হয়। আর এসব মৃত্যুর মধ্যে শিশুমৃত্যুর হারই সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
এমএএম/একে