ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

ভোলা: চিকিৎসক সংকটে ভুগছে ভোলার স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার একটি সদর হাসপাতাল, একটি টিবি ক্লিনিক, নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৬২টি ইউনিয়ন ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের।

জানা যায়, এ জেলার মানুষ সদর হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল হলেও সেখানে শূন্য রয়েছে চিকিৎসকের ১০টি পদ। হাসপাতালগুলোতে গাইনি, কার্ডিওলজিস্ট, সার্জারি ও চক্ষুসহ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য।

পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়ে অন্য জেলায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ
জেলার সর্বমোট ২০৬টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ৮৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন জেলার ১৮ লাখ মানুষ।

এদিকে, জেলার মানুষকে উন্নত সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ২৫০ শয্যার আধুনিক একটি জেনারেল হাসপাতাল স্থাপিত হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। কবে নাগাদ হাসপাতালটি চালু হবে তা নির্ধারণ হয়নি। যে কারণে উন্নত চিকিৎসা সেবাও থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে ভোলার মানুষ।  

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। এখানে ডাক্তারের ২২টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১১ জন। অন্যদিকে সদরের টিবি ক্লিনিকে নেই কোনো চিকিৎসক। এখানে দুইটি মাত্র পদ থাকলেও সেখানে কোনো ডাক্তারই নেই। ৫০ শয্যার বোরাহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেখানে ডাক্তারের ২১টি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র নয়জন। এখানে চিকিসকের ১২টি পদ শূন্য। দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি পদের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র সাতজন। এখানে শূন্য রয়েছে ১৪টি পদ। খায়েরহাট হাসপাতালেও চিকিৎসক সংকট। এখানে চিকিৎসকের নয়টি পদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র ছয়জন। ৫০ শয্যার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে ১১টি পদই শুন্য। এছাড়াও চরফ্যাশন ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২১ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১২ জন চিকিৎসক। এখানে চিকিৎসকের নয়টি পদ শূন্য। এছাড়াও তজুমদ্দিনে চার, মনপুরায় পাঁচ ও দক্ষিণ আইচা হাসপাতালের একটি পদ শুন্য রয়েছে। জনবল সংকটে ধুকছে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোও। জেলার সাত উপজেলার ৬২টি ক্লিনিকের মধ্যে নয়টি পদ শূন্য রয়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে জেলার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

ভোলা সদর হাসপাতালে তিনবছরের অধিক সময় ধরে কার্ডিওলজিস্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ নেই। এছাড়াও জেলার অন্য হাসপাতালে সার্জারি, গাইনী, কার্ডিওলজিস্ট ও চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় অনেকটাই ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। জনবল সংকটের পাশাপাশি সমস্যা রয়েছে প্রয়োজনীয় উপকরণেরও। বেশিরভাগ হাসপাতালে ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন নষ্ট। হচ্ছে না বড় ধরনের কোনো অপারেশন।
 
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ভোলায় জেলায় ৬৯জন চিকিৎসক পদায়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও চিকিৎসক সংকট কমছে না। চিকিৎসক সংকট লেগেই রয়েছে এ জেলায়।

ভোলা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. তৈয়বুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতি মাসেই চিঠির মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ জেলায় জনবল দেওয়া হয়নি। তবুও আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। কিছু হাসপাতালে ইউনিয়ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে, সেটি চালু হলে স্বাস্থ্য সেবার এমন সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।