ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা ভাইরাস: আতঙ্কে বেড়েছে মাস্ক বিক্রি-দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
করোনা ভাইরাস: আতঙ্কে বেড়েছে মাস্ক বিক্রি-দাম

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেশি রয়েছে এ নতুন রোগ নিয়ে আতঙ্ক। আর সে আতঙ্কে বাংলাদেশেও বাড়ছে মাস্ক বিক্রি ও দাম। তাছাড়া মাস্কের সংকটও দেখা দিয়েছে রাজধানীতে।

মঙ্গলবার (৪) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।

মানুষ থেকে মানুষে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে আতঙ্কিত হলেও চিকিৎসকরা বলছেন, মাস্কের প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশে নেই।

কেননা আমাদের দেশে এ রোগী নেই। থাকলে প্রয়োজন ছিল। আবার সরকারের এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাস্ক পরতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে দ্বিধাবিভক্ত সাধারণ জনগণ গণহারে মাস্ক ব্যবহার করছে। তবে এতে কোনো ক্ষতি নেই, বরং উপকারই হচ্ছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু এ সুযোগে মাস্ক ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম হাঁকিয়ে অনৈতিকভাবে মাস্ক বিক্রি করে চলেছেন। ফলে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন ক্রেতারা।  
 
এক্ষেত্রে সাধারণ মাস্কের চেয়ে জীবাণু প্রতিরোধক মাস্কের চাহিদা রাজধানীতে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার তোপখানা রোড এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্টের মার্কেটে এ ধরনের মাস্ক সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সিনথেটিক কাপড় ফাইবার দিয়ে তৈরি এ মাস্কগুলোর স্বল্পতার পাশাপাশি দাম আগের চেয়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া ফুটপাতে হকারদের কাছেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও বিক্রির চাপ। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধের দোকানে মেডিকেটেড মাস্ক তো দূরের কথা সাধারণ মাস্কই পাওয়া যাচ্ছে না, আর যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম কোথাও দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত রুবাব মোহাম্মদ হৃদয় বাংলানিউজকে বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মাস্ক কেনার জন্য বাসার কাছে মিরপুরে ওষুধের দোকানে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। পরে একটা ওষুধের দোকানে সাধারণ ৫ টাকা দামের মাস্ক পেলাম কিন্তু দাম চাইলো ৩০ টাকা। না কিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টোপাশে বিএমএ মার্কেটে মেডিকেটেড মাস্ক পেলাম যার মূল্য চাইলো ৯০ টাকা। এর আগে এই মাস্ক ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এখন দামের এই বিশাল ফারাক। এখন সরকারসহ সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে বলছে, আমরাও ব্যবহার না করেই বা কী করবো?

এজাজ এহতেশামুল হক নামে বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আরেক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, ফুটপাতেও ইদানীং মাস্ক পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তার দাম অনেক। আবার সরকার থেকে বলা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করতে, তাই আমরাও ব্যবহার করছি। আবার করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে নেই বলে মাস্কের প্রয়োজন নেই বলেও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে করোনা ভাইরাস ৩০ শতাংশ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় উল্লেখ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. সেবরিনা ফ্লোরা বাংলানিউজকে বলেন, এ রোগ ৩০ শতাংশ মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই মাস্ক ব্যবহার করা ভালো। তবে বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত কেউ নেই।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া আটজনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে যে, কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। এর মধ্যে ৭ জনকে আশকোনা কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরের কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে অবস্থানরত চীন থেকে আগত একজন যাত্রীর জ্বর দেখা দেওয়ায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনটি পরিবারের শিশুসহ আটজনকে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন।

ওদিকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশ ও চীনের যাতায়াত এখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা উচিত। এভাবে কিছুদিন যাতায়াত বন্ধ থাকলে ভাইরাস আমাদের দেশে আসতে পারবে না।  

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ আরো বলেন, আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশে এ ভাইরাস এসে পৌঁছায়নি। আমরা দেশের আন্তর্জাতিক বন্দরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর কোনো সমস্যা নেই। কেননা চীনে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চীন ওই ব্যক্তিকে চীন থেকে বের হতে দিচ্ছে না।  

মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, মাস্ক পরে অর্থ অপচয় করার দরকার নেই। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা ধরা পড়লে মাস্ক পরলেই চলবে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।                

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
এমএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।