সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে নেওয়া ট্রেড লাইসেন্সের জোরে চলা ট্রমা সেন্টার এবার জন্ম দিলো অঘটনের। অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) রোগীকে কাটাছেড়া অবস্থায় রেখে চলে গেছেন ‘বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসক।
এমন ঘটনা ঘটেছে সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকার ‘সিলেট ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হসপিটালে। নামে বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন নেই। কেবল ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভিকটিম কাতার ফেরত প্রবাসী মনছুফ মিয়ার স্বজনরা এ অভিযোগ করেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা ভবনের ২০টি ছোট-বড় রুম কেবিনে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রায় সব রুমেই অস্ত্রোপচারের রোগী। দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫টি অস্ত্রোপচার করেন অর্থপেডিক্স চিকিৎসক সুমন মল্লিক।
মনছুফ মিয়ার স্বজনরা জানান, কাতারে থাকাবস্থায় মনছুফ মিয়ার পায়ের গোড়ালি ভাঙে। অস্ত্রোপচারও হয় সেখানে। প্রবাসে থাকতেই প্লেট লাগান পায়ে। দেশে আসার পর প্লেট অপসারণের জন্য সপ্তাহ দু-এক আগে আর্থোপেডিক সার্জন সুমন মল্লিকের শরণাপন্ন হন। অস্ত্রোপচারে ৩২ হাজার টাকা দরকষাকষির পর তারই পরামর্শে ট্রমা সেন্টারে ভর্তি হন মনসুফ।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের কাজলশাহ পপুলার ডায়গানস্টিক সেন্টারে চেম্বার সেরেই রাতে মনছুফ মিয়াকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান চিকিৎসক। সে সময় ২০ হাজার টাকা কাউন্টারে জমা দিতে বলা হয় রোগীকে। তার কথামতো টাকাও পরিশোধ করেন রোগীর স্বজনরা। মিনিট দশেক পর ওটি থেকে বেরিয়ে এসে চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের বলেন- অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। এই চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, বিদেশে নিতে হবে। পাশাপাশি জমা দেওয়া ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৮ হাজার টাকা রোগীর স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন ওই চিকিৎসক।
এ বিষয়ে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. সুমন মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অস্ত্রোপচারে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন তিনি।
তিনি জানান, হাসপাতালের অনুমোদন ও সেখানে অস্ত্রোপচার করার অনুমতি আছে কি-না এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হসপিটাল সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুমোদনের জন্য তারা ৩ মাস আগে আবেদন করেছেন। তবে কার্যক্রম চালানোর জন্য সিটি করেপারেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। হাসপাতালের অনুমোদনের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।
অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো হাসপাতালেই ছাড়পত্র নেই, সবাই এভাবেই হাসপাতাল পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক দেবপদ রায় বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে আবেদন করা হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে অনেক সময় আমাদের জানানো হয় না।
নিজেদের গাফিলতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবেদন করেছে এমন কয়টা হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদেরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেনে নেওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
এনইউ/এইচএডি/