ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৪৯ জনের চোখের আলো ফেরালো ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২০
৪৯ জনের চোখের আলো ফেরালো ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল’ বসুন্ধরা আই হসপিটালে রোগীর অপারেশন করা হচ্ছে। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ‘বয়সের ভারে ন্যুজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চেনাখালী ফলিফাপাড়ার বাসিন্দা হোসেন আলী। বয়স ৮০ ছুইঁ ছুইঁ ওই বৃদ্ধ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে শেষ বয়সে ঘোর অন্ধকারেই কাটছিল হোসেন আলীর জীবন।

জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ওই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ালো ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ’

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’ বিনামূল্যে চোখে অপারেশন করা হয় বৃদ্ধ হোসেন আলীর।

বসুন্ধরা আই হসপিটালে রোগীর অপারেশন করা হচ্ছে।  ছবি: জিএম মুজিবুরঅপারেশন পরে চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়ে বৃদ্ধ হোসেন আলী যেন নতুন জীবন ফিরে পেলেন । দৃষ্টি ফিরে পেয়ে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি।

শুধু বৃদ্ধ হোসেন আলীই নয়, বৃহস্পতিবার মোট ৪৯ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষকে বিনামূল্যে অপারেশন ও ওষুধ দিয়ে চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে আর্ত মানবতার সেবায় নিবেদিত বসুন্ধরা গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠান।

বৃদ্ধ হোসেন আলীর মতোই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কালিনগর গ্রামের আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধা নূরজাহান চোখে দেখতে পেতেন না। সন্তান থাকা সত্ত্বেও তারা দৃষ্টিহীন মায়ের চোখে আলো ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। ‘বুড়ো মানুষ দৃষ্টিহীন হয়’ সাধারণ এই ধারনার শিকার হয়ে ৭৫ বছর বয়সে এসে নূরজাহানের অন্ধ চোখ দিয়ে কেবলই অশ্রু গড়িয়েছে। বসুন্ধরা আই হসপিটালে রোগীদের সেবা দেওয়া করা হচ্ছে।  ছবি: জিএম মুজিবুর‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ সহায়তায় সেই নূরজাহানও এখন ফিরে পেয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। আর ১০টা সুস্থ-সবল মানুষের মতো যুক্ত হয়েছেন সমাজের মূলস্রোতে। চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সেই ৪৯ নারী-পুরুষের মুখে হাসির ঝিলিক।

অন্ধজনে দেহ আলো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই পঙক্তির বাস্তব রুপ যেন দিচ্ছে ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট’।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষ্ণগৌবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন, বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে প্রায় এক হাজার ৮৬০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৫১০ জন রোগীকে ছানি ও অন্যান্য অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয়। এর মধ্য থেকে ২৩ জন পুরুষ ও ২৬ নারীসহ মোট ৪৯ জন রোগীকে অপারেশন করার জন্য ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’ নিয়ে আসা হয়। অপারেশনের পর রোগীরা।  ছবি: জিএম মুজিবুরবৃহস্পতিবার সকালে ৪৮ জনের চোখের ছানি ও একজনের নেত্রনালী অপারেশন করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ আহমেদর নেতৃত্বে অপারেশন টিমে ছিলেন ডা. মৌটুসী ইসলাম ও ডা. রুবিনা আখতার।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিমাসে সারাদেশে মাঠপর্যায়ে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প করা পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে বেশকিছু এলাকায় চক্ষু ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্য থেকে অপারেশনযোগ্য রোগীদের ঢাকায় বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে এনে চোখের আলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।

চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনকবলিত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের অসহায় ৪৯ জন মানুষকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন ও ওষুধ প্রদান করে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

টাকার অভাবে কেউ অন্ধ হবে না, সেটাই প্রমাণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠান বলে যোগ করেন আমিনুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২০
টিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।