মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আলোচকরা। ২০২০ সালকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক নার্স ও মিডওয়াইফ বর্ষ ঘোষণা উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় আলোচকরা বলেন, নার্স ও মিডওয়াইফদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭২ তম অধিবেশনে ২০২০ সালকে আন্তর্জাতিক নার্স ও মিডওয়াইফ বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর আধুনিক নার্সিং সেবার পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের ২০০তম জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা খাতে বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ নার্স ও ২০ লাখ মিডওয়াইফ রয়েছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের মোট জনবলের ৫০ শতাংশ । ২০২০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বে আরও ৯০ লাখ নার্স ও মিডওয়াইফ প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, নার্সিং সেক্টর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক সৎ ইচ্ছা আছে। বিশ্বের অনেক দেশের সাপোর্ট রয়েছে। আমাদের অনেক সুযোগ আছে। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই আপনাদের পরামর্শ আমাদের প্রয়োজন। এই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চাই।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন বলেন, ১ জন ডাক্তারের বিপরীতে ৩ জন নার্স প্রয়োজন। আমাদের ডাক্তার আছে ৩০ হাজার। এক্ষেত্রে নার্স প্রয়োজন ৯০ হাজার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নার্স ও মিডওয়াইফাদের জন্য নতুন পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে একটি অর্গানোগ্রাম করা হয়েছে। সেখানে ৭৫ হাজার নার্সের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ৩২ হাজার ৫৯১ জন নার্স ও ১ হাজার ১৪৯ জন মিডওয়াইফার কর্মরত আছেন। মিডওয়াইফদের জন্য ১ হাজার ৮৫০টি শূন্য পদ পূরণের জন্য চাহিদাপত্র পিএসসির কাছে পাঠানো হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ প্রদান করা হবে। এছাড়া নার্স ও মিডওয়াইফদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। একমাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। তখন আমরা সহজেই জানতে পারবো কে কোন বিভাগে, কোন জেলায়, কোন হাসপাতালে কাজ করছে, কার কেমন বেসিক, কার কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাগবে বা কোথায় কাজের পরিধি কেমন। সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। স্বাস্থ্য খাতে সংখ্যার দিক দিয়ে ডাক্তারদের পরেই নার্সের অবস্থান। আমাদের ডাক্তার স্পেশালিস্ট আছে, ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নার্সদেরও স্পেশালিস্ট করে গড়ে তোলা হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারদের উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ত্রিমুখী উন্নয়ন, জেন্ডার সমতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব। যার টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক হবে। নার্স ও মিডওয়াইফদের নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তাদের নেতৃত্বের বিকাশ করে স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব বৃদ্ধি, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নার্স ও মিডওয়াইফদের মত প্রকাশের উপযুক্ত সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি রোগী ও অন্যান্য সেবা গ্রহণকারী, স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের কাছে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের অভিষ্ট অর্জনে নার্সিং ও মিডওয়াইফদের ভূমিকা তুলে ধরতে হবে। এছাড়া আমাদের এখানে ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এটিও দূর করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাই। এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফারি বিশেষজ্ঞ রন্ডি অ্যান্ডারসন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ভার্ডন জং রানা, বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির সচিব কারিমন আক্তার, বাংলাদেশ নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমত আরা পারভীন, বাংলাদেশের হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২০
পিএস/এইচজে