সোমবার (৯ মার্চ) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভা শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
দেশে করোনার হুমকির মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। স্কুল-কলেজে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীরা আসে। সেখানে বহিরাগতরা আসে না। কাজেই সেখানে ঝুঁকি বা আশঙ্কা খুবই কম। আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয়কে বলেছি, স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে হ্যান্ড সেনিটাইজার দেওয়া হয়, যাতে ছেলেমেয়েরা হ্যান্ড ওয়াশিং করে। এই মেসেজটা সব পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। স্কুল স্বাভাবিকভাবেই চলবে, এটিই নির্দেশনা। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো নির্দেশনা আসে, সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
করোনা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান সীমিত করার পরামর্শ জানিয়ে জাহিদ মালিক বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জায়গার লোকজন আসে, সেখানে কোনো কন্ট্রোল থাকে না। এ জন্য সেখানে সাবধানতা খুবই প্রয়োজন।
দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় পর্যাপ্ত কিটস আছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ে কোনো ম্যাসাকারের কথা আমরা আগে না বলি। আমরা ভালো থাকবো আশা করি। কীটস ও মেশিন পর্যাপ্ত রয়েছে। আরও অর্ডার করা হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে একটু সংকট রয়েছে। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে আনার চেষ্টা করছি।
নিজেদের প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট। যেহেতু করোনা চলে আসছে আমরা মনে করি, আগামীতে প্রস্তুতি আরও বাড়ানো হবে। যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেটা আমরা করবো। আমাদের সাধ্যমতো সেই চেষ্টা থাকবে।
বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে করোনা যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে উদ্দেশ্যে এই মুহূর্তে কোনো ফ্লাইট বন্ধ করা যায় কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ৪টি দেশের অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করেছি। আর কোনো দেশে যদি করোনা বেশি ছড়িয়ে যায়, তাহলে সে সব দেশের অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে কোনো ফ্লাইট বন্ধ করার পরিকল্পনা আমাদের নেই।
করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে জাহিদ মালিক বলেন, করোনার লক্ষণ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। কাজেই আমরা যদি হাত ভালোভাবে ধুই, তাহলে সংক্রমণ কম হবে। এই ভাইরাস ইবোলা ভাইরাসের মতো মারাত্মক নয়, কিন্ত খুব ছোঁয়াচে। করোনায় মৃত্যুর হার কম, ২ থেকে ৩ শতাংশ। ইবোলায় মৃত্যুহার ছিল ৯০ শতাংশ। তাই আশা করবো সামাজিক মিডিয়াতে যেন রিউমার না ছড়ায়। আমাদের আন্তরিকতা আছে। তব কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যেমন ঘনবসতি, এছাড়া আমাদের এক কোটি লোক বিভিন্ন দেশে কাজ করে। ১০২টা দেশে করোনা ছড়িয়ে গেছে। কাজেই পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সবাই যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সাহায্য করে, তাহলে আমাদের জন্য করোনা মোকাবিলা সহজ হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংক ১০০ মিলিয় ডলার বরাদ্দ দিয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য বিশ্ব ব্যাংক এক বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এর থেকেও বেশি লাগবে। আমরা নিজেরা যতটুকু পারি সাহায্য করবো। আর যারা সাহায্য করবে, সেটা আমরা গ্রহণ করবো। আমি আহ্বান করবো, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১ লাখ ৫ হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন। করোনা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে আমরা ৫ লাখ লোককে স্ক্রিনিং করেছি। আমাদের স্ক্রিনিং আরও বাড়াতে হবে। আমরক সবার সহযোগিতা চাই।
আরও পড়ুন>>> প্রবাসীদের দেশে না আসার অনুরোধ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২০
জিসিজি/এইচজে