ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া রোগীদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনই ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ কলেজের ডেন্টাল বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও শেষ দুইবর্ষের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।
তবে এসব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দ্রুত মেরামত করে ইউনিটের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন।
হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে ২০১২ সালে স্বতন্ত্র ডেন্টাল বিভাগের কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। এরপর হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ অর্থাৎ যেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় পরের বছর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
যার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ডেন্টাল বিভাগটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে স্ক্যালিংসহ ১২ টির মতো ডেন্টাল চেয়ার বা ইউনিট, এক্সরে মেশিনসহ আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ছিল।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে একাধিকবার স্ক্যালিংসহ ডেন্টাল চেয়ারগুলো নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে যায়। উদ্যোগে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেরামত করিয়েও তা বেশিদিন চালাতে পারেনি।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ রুবেল বলেন, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ডেন্টাল বিভাগের স্ক্যালিংসহ ডেন্টাল চেয়ারগুলো বিকল হতে শুরু করে। সর্বশেষ ভালো অবস্থায় থাকা দুটি ডেন্টাল চেয়ার গত দুই সপ্তাহ আগে বিকল হয়ে পড়ে। এক্সরে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে বহুদিন ধরে। এরপর থেকে পূরাতন ২৮ ও নতুন ১২ জনসহ মোট ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কোনো কাজ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে বিভাগের ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষর্থীরাও ব্যবহারিক কিছু শিখতে পারছে না।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পল্লব সরকার বলেন, যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে কোনো রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না, ফলে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ৫ চিকিৎসকসহ সেবিকা ও কর্মচারীরাও অলস সময় পাড় করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি আমরা যারা শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছি। আর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা ইন্টার্নরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। তবে একে কর্মবিরতি বলা যাবে না- কারণ যন্ত্রপাতি সচল রেখে তো আমরা কাজ বন্ধ রাখিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় নতুন রোগীও ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে ওয়ার্ডটিতে মাত্র একজন রোগী রয়েছেন। তাকে ঘিরে ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসক, সেবক-কর্মচারীদের সবারই ব্যস্ততা। এদিকে প্রায় দুইমাস ধরে এক্সরে মেশিন বিকল থাকায় সেই কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
শেবাচিম-এর ডেন্টাল বিভাগের দায়িত্বরত রেজিস্ট্রার ডা. শাহরিয়ার বলেন, ডেন্টাল বিভাগের সবগুলো চেয়ার বা ইউনিট বিকল হয়ে পড়ায় গত শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কার্যক্রম অর্থাৎ কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানান। এরপর তারা কাজকর্মও বন্ধ করে দেন। আবার যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় কোনো রোগীকে আমরাও ভর্তি নিতে পারছি না। বহিঃবিভাগকে সে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘যেখানে বহিঃবিভাগে প্রতিদিন একশ’ ও ইনডোরে ৫০ জন রোগীর সেবা দেওয়া হতো, সেখানে এখন বেডগুলো খালি পড়ে রয়েছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে, আশাকরি শিক্ষার্থী ও রোগীদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত সমাধান করা হবে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এমএস/এমএ