ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নরসিংদীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৭ জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২০
নরসিংদীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৭ জন

নরসিংদী: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ১০০ শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

এছাড়া নরসিংদীর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নরসিংদীর প্রধান দুটো চিকিৎসাকেন্দ্র জেলা ও সদর হাসপাতালসহ সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলাদা আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পরিস্থিতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দিতে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।  

এদিকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রবাসফেরত ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্কতামূলক নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

নরসিংদীর সদর, রায়পুরা উপজেলায় সাত ব্যক্তিকে যার যার বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই সাত ব্যক্তি গত এক সপ্তাহ আগে ইতালি ও সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন।  

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা সাত ব্যক্তির চারজনই রায়পুরা উপজেলার এবং তিনজন পলাশ উপজেলার।   তাদের নিজ নিজ বাড়ির একটি নির্দিষ্ট কক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে রাখা হয়েছে।

এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রথম বৈঠকে বসেন ঊর্ধ্বতন চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনকে আহ্বায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি করা হয়। তারপরই দুটি প্রধান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের প্রধান করে রেপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়।

এই কমিটির কাজ হল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সন্ধান পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এছাড়া ১৫ দিন এর আগে থেকেই প্রতিটি হাসপাতালে অন্তত ৫টি করে বেড নির্দিষ্ট করে আইসোলেশন ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

সরেজমিনে নরসিংদীর দুটো প্রধান হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নরসিংদী জেলা হাসপাতালের একটি আলাদা একতলা ভবনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে আইসোলেশন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওই ইউনিটের তিনটি কক্ষে ৪টি বেড প্রস্তুত করা আছে।  

অন্যদিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের পক্ষ থেকে আগত ব্যক্তিদের কাছে সচেতনতামূলক লিফলেট প্রচার করা হচ্ছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটটিকে আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভবনটির নিচতলার ওই ইউনিটে একটি কক্ষে ১০টি বেড রয়েছে। তবে যারা সেবা দেবেন সেসব স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গাউনের মত উপকরণ সহযোগিতার স্বল্পতা রয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ১০০ শয্যার ব্যবস্থা রাখার সুবিধা আছে। একই সঙ্গে নরসিংদীর প্রধান দুটো চিকিৎসাকেন্দ্র জেলা ও সদর হাসপাতালসহ সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলাদা আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তবে জেলার দুটো প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র জেলা ও সদর হাসপাতালসহ কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে এখন পর্যন্ত কেউ ভর্তি হননি। অন্যদিকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা সাতজনের শরীরেই এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তারা সবাই সুস্থ আছেন।

তিনি জানান, এরই মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে মেডিক্যাল কনসালটেন্টসহ সব চিকিৎসকদের করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে মাস্ক ও গাউনের মত উপকরণ সহযোগিতা পাওয়া না গেলেও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে যারা প্রবাস থেকে এসেছেন বা আসছেন তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সন্দেহ হলে প্রয়োজনে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে আলাদাভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারা যাতে বাইরে ও জনসমাগম স্থলে যেতে না পারেন এবং নিরাপদভাবে থাকতে পারেন সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাদা পোশাকে পুলিশী পাহারা রাখা হবে।
এছাড়া আপাতত কোনো প্রকার জনসমাগমমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।