করোনা সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে এখন প্রয়োজন সচেতনতার। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবার সচেতনতায় কিছু বিষয় এখানে আলোচনা করা হলো।
১) প্রথম কাজ হচ্ছে সুস্থ থাকা। আপনার যদি কোনো রোগ থাকে তাহলে সবার আগে সেটির চিকিৎসা করে ঠিক করে নিন।
ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে নিন।
অ্যালার্জি, অ্যাজমা বা সাইনাস জনিত সমস্যা থাকলে এখন থেকেই সতর্ক হোন।
ঠান্ডায় হাঁচি কাশির প্রবণতা থাকলে এখন থেকেই ঠান্ডা থেকে দূরে থাকুন।
অর্থাৎ, আগে শরীরটাকে একদম রোগমুক্ত রাখুন। মনে রাখবেন, করোনা ভাইরাস বিপদজনক তাদের জন্যই, যাদের শরীর আগে থেকেই বিপদে আছে।
২) তারপর আপনার কাজ হচ্ছে প্রতিদিন পর্যাপ্ত এবং প্রশান্তির ঘুম। সহজ ভাষায় মশারি টানানো সুন্দর গোছানো বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুম। বিছানায় মোবাইল বা অন্যকিছু নেই। ঘুমানোর দুই তিন ঘন্টা আগেই খাওয়া দাওয়া শেষ করুন। একইসঙ্গে বিকেলের পর চা কফিকে একেবারেই না বলুন।
মনে রাখবেন, শরীর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পূনর্গঠন করতে পারে তখনই যখন আপনি সব কাজ ও চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকেন।
৩) মনটাকে সব প্রকার দুশ্চিন্তা এবং চাপমুক্ত করে ফেলুন। মেজাজ একদম ফুরফুরে করে ফেলুন।
দুশ্চিন্তা হচ্ছে আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। এ দুশ্চিন্তা থেকেই শরীরে রোগ বাঁধা শুরু হয়। আর মানসিক চাপের কারণে যেসব জঘন্য হরমোন আপনার শরীরের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয় তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একদম দুর্বল করে ফেলে।
৪) প্রচুর পানি ও পানীয় পান করুন। সাধারণ পানিই যথেষ্ট। সঙ্গে ফলের জুস, শরবত, ডাবের পানি এসব খেলে তো কথাই নেই!
তবে চা কফি ইত্যাদি পানি দিয়ে বানানো হলেও তা আপনার শরীরে পানি বাড়ায় না বরং পানি শুষে ফেলে। তাই চা কফি অর্থাৎ ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করতে হিসেবি হোন।
৫) শাকসবজি ফলমূল প্রচুর খেতে হবে। একেক রঙের শাকসবজি ফলমূলে একেক রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। অনেক রঙের শাকসবজি খেতে পারলে অনেক রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করবেন আপনি। যেমন লাল, হলুদ আর সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম, লাল শাক, গোলাপি রঙের গাজর, কমলা রঙের কমলা, কালো আঙ্গুর ইত্যাদি নানা রঙের রঙীন শাকসবজি আর ফলমূল খেতে থাকুন।
প্রচুর ভিটামিন সি ও এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খান। লেবু, আমলকি, কাঁচামরিচ ইত্যাদি প্রতিদিন খেতে হবে।
৬) সামনের কয়েকটা দিন রাস্তাঘাটের পোড়া তেলের ভেজাল স্ন্যাক্স, হজম গণ্ডগোল করে এমন অখাদ্য, তেলযুক্ত খাবার, অতিমাত্রায় চিনি, চর্বি এসব খেয়ে শরীরকে বিষাক্ত আর কাহিল করা যাবেনা। ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খান।
৭) ওষুধি খাবারকে এমনি এমনি ওষুধি বলা হয়না। বৈজ্ঞানিকভাবে এগুলো প্রমাণিত।
শরীরকে চাঙ্গা করতে সহজলোভ্য কিছু রোগ প্রতিরোধী খাবারের মধ্যে,
- মধু
- কালিজিরা
- গরম দুধ দিয়ে হলুদ বাটা/ গুড়ো
- গরম দুধ আর রসুন
- গরম পানি দিয়ে লেবুর রস
- গরম পানি আর আদা
- গরম পানি, দারচিনি ইত্যাদি।
৮) মনকে ইতিবাচক রাখুন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ইবাদত ও প্রার্থনা করুন। রাগ, ক্ষোভ, উত্তেজনা বাদ দিন। দান করুন ও মানুষের সেবা করুন।
মনের ইতিবাচকতা মানুষের শরীরের উপকারি হরমোনের প্রবাহকে বাড়িয়ে দেয়। তখনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকমত কাজ শুরু করে এবং শরীরে জীবাণুর আক্রমণ কঠিন হয়ে যায়।
৯) অলস থাকবেন না। হালকা ব্যায়াম করুন।
কাদের ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন?
১) শিশু ২) বৃদ্ধ ৩) অসুস্থ ৪) দুর্বল ৫) যেকোনো প্রকার শ্বাসকষ্টের রোগী ৬) ক্যান্সার / কেমোথেরাপি নিচ্ছে বা নিয়েছিলো এমন রোগী। ৭) প্রচন্ড শারীরিক ধকলের, জটিল রোগের ভেতর যাবার ইতিহাস আছে এমন কেউ।
আপনার পরিবারে এমন যারা আছে, বিশেষ করে অসুস্থ বা বৃদ্ধ বাবা-মা, তাদের এখনই সব সুবিধাসহ একটি রুমে আলাদা করে থাকতে দিন। তাদের রুম থেকে বের হবার দরকার নেই। আপনারাও একদম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে মাস্ক পরে নিরাপদ দূর থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কয়েক সপ্তাহ এমন চরম সাবধানতার বিকল্প নেই।
প্রফুল্ল থাকুন, বিশ্রামে থাকুন, সঠিক খাবার খান, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থেকে সংক্রমন এড়িয়ে চলুন। ইবাদতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং দুর্যোগপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে তার কাছে সাহায্য চান। ইনশাআল্লাহ সবকিছু মঙ্গলজনক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
এবি/এজে