ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা: সুস্থ হয়ে সন্তানদের কাছে সেই নার্স

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
করোনা: সুস্থ হয়ে সন্তানদের কাছে সেই নার্স

ঢাকা: ‘আমি বাচ্চাদের আদর করতে পারবো তো? আমি আবারও আমার ফুটফুটে দুই শিশুকে কোলে নিতে পারবো তো? শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসব কথা চিন্তা করে চোখের পানি ফেলেছি হাসপাতালে। অবশেষে আল্লাহ আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। আমি আবার ফিরে এসেছি আমার স্বামী ও সন্তানদের কাছে।’

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স। বাসায় ফেরার পর শনিবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে ফোনে বাংলানিউজকে এসব কথা জানান সেই নার্স।

তিনি বলেন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বাচ্চাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হতো। আমার দুটি মেয়ে। একজনের বয়স ছয়, অপরজনের বয়স আড়াই। কী যে যন্ত্রণা হতো আমার আপনারা বুঝবেন না। বারবার আমার দুটি ফুটফুটে শিশু বলতো, আম্মু কবে আসবা, কবে আসবা। তখন মনে মনে বলতাম, হে আল্লাহ, আমি কী আমার বাচ্চাদের আবার কোলে নিতে পারবো? তাদের আবার কোলে নিয়ে আদর করতে পারবো? আমি সবসময় আমার সন্তানদের বুকে আগলে রাখতাম। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় যখন তাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতাম মনে হতো বাসায় চলে যাই। আমার নিষ্পাপ দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করি। কি যে কষ্ট হতো, আমি তো মা, আপনারা বুঝবেন না।

‘অবশেষে সাতদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে আমার সন্তানদের কাছে ফিরে এসেছি। মৃত্যুর খুবই কাছ থেকে আমি ফিরে এসেছি। আমি জানি না কার মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমি ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের ইমারর্জেন্সি ওটিতে ডিউটি করি। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে সেখানে। তাদের সেবা দিতে হয়। হয়তো সেখান থেকেও হতে পারে বা অন্য কোথাও থেকেও আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারি। ’

তিনি বলেন, দেশের মানুষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, সরকার যেভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে সে অনুযায়ী আপনারা বাসায় থাকেন। আমি জানি এই রোগে আক্রান্ত হলে কতটা কষ্ট হয়। আপনাদের বোঝাতে পারবো না। প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই দ্রুততম সবকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে। ফলে আমি হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়েছি।

কীভাবে বুঝলেন তিনি আক্রান্ত এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নার্স বলেন, ২১ মার্চ হাসপাতলে ডিউটি করে বাসায় ফিরেছি। তখন সামান্য জ্বর ও গলা বসে গেছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি আমার অবস্থার কথা আমার ইমার্জেন্সি ইনচার্জকে জানাই। ইনচার্জ দ্রুত আমাদের হাসপাতালের পরিচালককে এ বিষয়টি অবগত করেন। পরিচালক দ্রুত আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) খবর দেন। সেখান থেকে লোকজন ২১ মার্চ এসে আমার স্যাম্পল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ২৪ তারিখ সকালে কিছুটা সুস্থ লাগলে আমি ডিউটির জন্য রেডি হচ্ছিলাম। তখন আইইডিসিআর থেকে জানতে চাওয়া হয়, আমি বাসায় আছি কি-না। পরে একপর্যায়ে আমি জানতে পারি আমার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমি কখনো চিন্তা করিনি যে, আমি এতে আক্রান্ত হবো। পরে হাসপাতালের পরিচালক বারবার আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন। ঢামেকের একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। একপর্যায়ে আমি সেখান থেকে সুস্থ হয়ে আবার স্বামী ও আমার ফুটফুটে দুই সন্তানের কাছে ফিরে এসেছি। এখনো আমি বাসায় অবস্থান করছি।

‘মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি আমি। আমার অনেক সহকর্মী আমার সুস্থতার জন্য রোজা রেখেছেন, তাদের ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। আমি আবার আমার কর্মস্থলে ফিরে যেতে চাই, মানুষের সেবা করতে চাই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
এজেডএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।