ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বরিশালে লক্ষণবিহীন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২০
বরিশালে লক্ষণবিহীন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

বরিশাল: স্বাভাবিক জ্বর, সর্দি বা কাশির লক্ষণ ছাড়াই বরিশালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়েও পড়েছেন। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণেই করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, মূলত কিছু লক্ষণ করোনার আক্রান্ত রোগীকে চিহ্ণিত করে। তবে সম্প্রতি আমরা লক্ষণ ছাড়াই বরিশালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাচ্ছি, যার সংখ্যাও অনেক।

আর লক্ষণ ছাড়া যাদের শনাক্ত করা হচ্ছে, তার মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা লোকজন। কিন্তু নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা পজেটিভ আসলেও বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ধরা পড়ছে না।

তিনি বলেন, তাই এখন বলা যায় লক্ষণ থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, না থাকলেও হতে পারেন। আর লক্ষণের মধ্যেও চারটি ভাগ রয়েছে, যেগুলো হলো মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও মারাত্মক তীব্র। যদি কেউ লক্ষণবিহীন করোনা পজেটিভ হন তবে তিনি অবশ্যই হোম আইসোলেশনে থাকবেন, বাহিরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। আর যাদের লক্ষণ আছে তারা হাসপাতালে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিবেন।

ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা নিতে আসা অনেকেরই এখন করোনা পজেটিভ দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর নির্ধারিত উপসর্গ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। কিন্তু পরীক্ষা করালে দেখা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত।

তিনি বলেন, এটি উদ্বেগের কারণ। এই অঞ্চলের মানুষকে প্রকৃতপক্ষে সচেতন করে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে অধিকহারে সংক্রমিত হয়ে পড়ছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৬১ জন পদস্থ পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিসিম, কোতয়ালি মডেল থানার তদন্ত ওসি আবদুর রহমান মুকুলসহ এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমার্স চেইন রিএ্যাকশন (আরটি পিসিআর) ল্যাব সূত্রে জানা যায়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের যতজনের করোনা পজেটিভ এসেছে তার অধিকাংশই নির্ধারিত চেকআপে শনাক্ত হয়েছেন। যারা এখন পর্যন্ত শনাক্ত তাদের কয়েক জনের মৃদু উপসর্গ ছিল। আবার অনেকের কোনো উপসর্গই ছিল না। কিন্তু পরীক্ষা করাতে এসে দেখা গেলো উপসর্গহীনদের মাঝেই করোনা পজেটিভ। দিন দিন এই রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে ল্যাবটির কর্মরতরা।

মূলত, বিগত ১১ মে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার আবুল কালাম আজাদের গাড়ি চালকের করোনা শনাক্ত হয়। এরপরই বিএমপি সিদ্ধান্ত নেয় ধারাবাহিকভাবে সকল পুলিশ সদস্যের করোনা টেস্ট করানো হবে। ধারাবাহিক চেকআপ করাতে গিয়ে অনক উপসর্গহীন পুলিশ সদস্য রিপোর্ট পাচ্ছেন করোনা পজেটিভ।

সর্বশেষ করোনা পজেটিভ আসা বরিশাল মেট্রেপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রলয় চিসিম সাংবাদিকদের জানান, নূন্যতম কোন লক্ষণ তার মধ্যে ছিল না। বস্তুত মেট্রোপুলিশের অনেক সদস্য দিন দিন আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া শুরু থেকেই জনসম্পৃক্ত হয়ে কাজ করেছেন তিনি। সেই কারণে ২৯ মে করোনা টেস্টের নমুনা দিয়ে আসেন। ৩১ মে রাতে শেবাচিমের ল্যাব থেকে জানানো হয় তিনি করোনা পজেটিভ। এই কর্মকর্তা মনে করেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারনে তিনিও সংক্রমিত হয়েছেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, জনগণের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রায় দুই হাজার সদস্য দিনরাত কাজ করছে। নিয়মিত টহল, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থাও করছেন এই পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি করোনা শনাক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা, রাস্তায় জীবাণুনাশক সিটানো, অসহায়-কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছানোর মতো কাজ নিয়মিতই করছেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদস্যদের বাইরে গতকাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম বড়াল, প্রিয়াংকা দাস, তৌফিক এলাহি আহাদের রিপোর্ট করেনা পজেটিভ এসেছে। তাদের সঙ্গেও আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করায় মনের সন্দেহে করোনা পরীক্ষা করালে ফলাফল সংক্রমিত আসে।

স্বাস্থ্য দফতর বলছে, যারা পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছেন তারমধ্যে ৫.৬ শতাংশ মানুষ করেনা আক্রান্ত এসেছে। পরীক্ষা করাতে আসা ১০ হাজার ৮৬৬ জনের মধ্যে ৬০৭৮ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। সেই ৬০৭ জনের মধ্যে ৩৪২ জনের বয়সের মাত্রা ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এটিও আরকেটি উদ্বেগের কারণ।

বিশ্বের অন্য দেশের করোনা রোগ স্ট্যাডি করলে দেখা যায় বয়স্করা সংক্রমিত বেশি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় (বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর) বেশিই আক্রান্ত হচ্ছেন কিশোর-যুবকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২০
এমএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।