ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নমুনা সংগ্রহের চুক্তির সময় জেকেজিও ছিল লাইসেন্সহীন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
নমুনা সংগ্রহের চুক্তির সময় জেকেজিও ছিল লাইসেন্সহীন

ঢাকা: ‘ওভাল গ্রুপ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির কর্ণধার হিসেবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেন আরিফুল চৌধুরী। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সুযোগ বুঝে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে বসেন। জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) নামে স্বাস্থ্য অধদপ্তরের সঙ্গে সম্পন্ন করেন নমুনা সংগ্রহের চুক্তি।

ইতোপূর্বে কোনো ধরনের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা কিংবা নমুনা সংগ্রহের অভিজ্ঞতা না থাকা জেকেজিকেই করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতায় লাইসেন্স না থাকা প্রতিষ্ঠান জেকেজির নামেই চুক্তি বাগিয়ে নেন আরিফুল।

অবশ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার মাস দুয়েক পর তড়িঘড়ি করে লাইসেন্স নেয় জেকেজি।  

করোনা পরীক্ষার নামে মনগড়া ভুয়া ফলাফল সরবরাহের দায়ে গ্রেফতার জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানান।  

পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জেকেজি বিনামূল্যে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেলেও টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ কিংবা পরীক্ষা না করেই ভুয়া ফলাফল সরবরাহের কথা স্বীকার করেছেন ডা. সাবরিনা। গত এপ্রিল মাসে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পেলেও জেকেজি লাইসেন্স নেয় জুন মাসে।  

জেকেজির অপকর্মের বিষয়গুলো জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে স্বীকার করলেও বারংবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন ডা. সাবরিনা। সব অপকর্মের দায় চাপিয়েছেন স্বামী আরিফুলের ওপর। ডা. সাবরিনার দাবি- তিনি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জেকেজিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন।

 

তার স্বামী আরিফুল টাকার বিনিময়ে ভুয়া ফলাফল বানাতেন। এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে তিনি জেকেজি থেকে আরও আগেই বেরিয়ে গেছেন। এমনকি আরিফকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন বলেও দাবি করেন।  

পুলিশ জানায়, ওভাল গ্রুপ লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেকেজি। সাবরিনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইভেন্টের কাজ পেয়ে আসছিল ওভাল গ্রুপ। সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। করোনার ভুয়ার ফলাফল দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান মানতে নারাজ তিনি।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে জানান, ইতোপূর্বে আরিফুলসহ গ্রেফতার জেকেজির অন্যান্য সদস্যদের সবাই এই অপকর্মের সঙ্গে ডা. সাবরিনার জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন। এখন গ্রেফতারের পর সব দায় স্বামী আরিফুলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টাকার বিনিময়ে করোনার ভুয়া ফলাফল সরবরাহের দায়ে গত ২৩ জুন জেকেজির নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ূন কবিরকে আটক করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। পরে
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান- ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে কোটি টাকা উপার্জন করতে দেখে তানজিনা জেকেজির কাছে বাড়তি বেতন দাবি করেছিলেন।  

বিষয়টি জানতে পেরে তানজিনা ও তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করেন জেকেজির কর্ণধার আরিফুল। পরে তানজিনা ও তার স্বামী হুমায়ূন বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া ফলাফল সরবরাহ শুরু করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আরিফুলসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।  

এদিকে, জেকেজির প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর রিমান্ডে থাকা ডা. সাবরিনাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

 

সরকারি চাকরিতে থেকে সাবরিনা চৌধুরীর স্বামী আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া মেডিক্যাল প্রতিবেদন প্রস্তত ও সরবরাহ করে আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রোববার (১২ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে।  

অভিযোগ রয়েছে, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন আরিফুল। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।

বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
পিএম/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।