বরিশাল: দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মবিরতির অবস্থান থেকে সরে এসে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ঘোষণার পরপরই বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দিনগত রাত আড়াইটা থেকে ইন্টার্নরা স্ব-স্ব ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনও শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সজল পান্ডে ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইউনিট-৪ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাসুদ খান সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। যাতে তারা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন।
এর আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করাসহ ডা. মাসুদ খান কর্তৃক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হয়রানিমূলক ও অশালীন আচরণ করা এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিনি উল্টো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেন এবং মামলা দেওয়াসহ নানানভাবে হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখাতে শুরু করেন।
আর গোটা বিষয় নিয়ে নিয়মানুযায়ী হাসপাতাল পরিচালক বরাবর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্মারকলিপি জমা দেন। সেসময় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করার আশ্বাস দিলেও এ অব্দি কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং ডা. মাসুদ খান হাসপাতালে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়াসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যাচার রটাচ্ছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইন্টার্নদেরও নানানভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কিছুর প্রতিবাদে এবং ডা. মাসুদ খানের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৫মিনিটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগের গেট আটকে দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। এ সময় তারা সেখানে দাঁড়িয়ে ডা. মাসুদ খানের বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ কারণে ভোলা, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলাসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা ভর্তি হতে না পরে ভোগান্তিতে পড়েন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা এসে ইন্টার্নদের সঙ্গে কথা বললেও জরুরি বিভাগের গেটটি বন্ধ রাখা হয়। পরে রাত ১টা ৫মিনিটে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এস এম সরোয়ার, হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন, উপ-পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে আসেন। তারা জরুরি বিভাগের গেট খুলে দিয়ে রোগীদের ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ইন্টার্নদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর ইন্টার্নরা জরুরি বিভাগের গেট খুলে দেন এবং হাসপাতালের নিচতলায়ই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
আলোচনা শেষে ইন্টার্নরা রাত আড়াইটার দিকে কর্মবিরতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সজল পান্ডে ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জানান, কলেজ অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের পরিচালক স্যারের দেওয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মবিরতি থেকে সরে এসে ইন্টার্নরা কর্মে ফিরে গেছেন। তবে যদি শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে ইন্টার্নদের হয়রানি বন্ধ ও অন্য দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের চলমান পরিস্থিতি সমাধানে সুষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ঘটনাগুলোর তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরাও জানতে চাচ্ছি হাসপাতালের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে কিনা। আর বৃহস্পতিবার যেসব কারণে ইন্টার্নরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সেসব বিষয় কলেজ অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে আমরা শুনেছি। যে বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলাসহ সমাধানে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। এরপর তাদের জরুরি বিভাগ খুলে দেওয়া এবং কর্মবিরতি থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলে তা তারা মেনে নেয়।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এস এম সরোয়ার বলেন, ইন্টার্নদের বয়স খুবই কম। তারা অল্পতেই যেমন ভয় পেয়ে যায়, আবার উত্তেজিতও হয়ে যায়। তারপরও তারা আমাদের কথা রেখেছেন। থানায় দেওয়া একটি এজাহারকে ঘিরে তারা যে আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। সে বিষয় নিয়ে শুক্রবার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। আর সৃষ্ট পুরো ঘটনার প্রতিটি বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২০
এমএস/এএটি