হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে ৩৫টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতে থাকলেও এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন মাথাব্যথা নেই।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের নয় উপজেলায় লাইসেন্সবিহীন ৩৫টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যার ১৬টিই জেলা শহরে। অন্যগুলোর মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, চুনারুঘাটে একটি করে, বাহুবলে দুইটি, নবীগঞ্জে দুইটি, মাধবপুরে আটটি এবং বানিয়াচং উপজেলায় রয়েছে তিনটি।
অবৈধ ৩৫টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনই করেনি আটটি। বাকি ২৭টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন জমা দিলেও এখনও পর্যন্ত তারা জমা দেয়নি সরকারি চালানের টাকা।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ শহরের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি চেয়ার দিয়ে একটি অভ্যর্থনা বিভাগ। ভেতরে রয়েছে কয়েকটি সিট। সেখানে নেই কোনো যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসম্মত অপারেশন থিয়েটার। অথচ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সের জন্য আবেদনই করেনি বলে স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই সেখানে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
লাইসেন্সের জন্য আবেদন না করা আটটি প্রতিষ্ঠান হল- জেলা শহরের সবুজবাগ এলাকার খোয়াই হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার প্রাইম কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চুনারুঘাট মধ্য বাজারের দি এ্যাপলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাধবপুর উত্তর বাজারের দি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাধবপুরের নোয়াপাড়ায় ডক্টর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাধবপুরের ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালের নিউ লাইফ কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড।
অন্যদিকে লাইসেন্সবিহীন বাকি ২৭টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু অনেকেই সরকারি ব্যাংক চালানের টাকাটা পর্যন্ত জমা দেননি বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্র।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অবৈধ বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একাধিক প্রতিনিধি (দালাল) সরকারি হাসপাতালে দিনরাত বসে থাকেন। গ্রাম থেকে আসা অসেচতন রোগীদের ভুল বুঝিয়ে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। এরপর আদায় করা হয় ইচ্ছেমত বিল।
শুধু দালালই নয়, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫টি ফার্মেসি। প্রতিটি ফার্মেসির অন্তত পাঁচ জন করে লোক ২৪ ঘণ্টা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকেন। গুরুতর অসুস্থ রোগীর স্বজনদের সাহায্যের নাম করে এসব লোকজন অধিক মূল্যে ওষুধ বিক্রি করেন।
এছাড়া এমবিবিএস কোর্সের সার্টিফিকেট না থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক এ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেজন্য প্রায়ই রোগীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এবং ভুল চিকিৎসায় অসুখ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি একজন ভূয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেটধারী প্রতারককে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্যবিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শুধু হবিগঞ্জ নয়, সারাদেশেই লাইসেন্স ছাড়া অনেক হাসপাতাল চলছে। এদের নির্দিষ্ট আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য সার্কুলার দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সময় পেয়েও যারা লাইসেন্স গ্রহণ করেননি, ভুল চিকিৎসা থেকে জনগণকে বাঁচানোর স্বার্থে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
অবসপ্রাপ্ত আরেকজন সরকারি চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসাসেবা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে সরকার বা সরকার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত লাইসেন্স নিয়ে চিকিৎসাসেবা স্থাপন করা যাবে এবং এগুলো চলবে লাইসেন্স নবায়ন শ্রেণী ও মান নির্ধারণ বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। কিন্তু আইন অনুসরণ না করে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতে থাকায় মফস্বল অঞ্চলে ভুল চিকিৎসা বেড়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। সাধারণ জনগণের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলিছুর রহমান উজ্জ্বল বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে এবং শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
আরএ