ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার অস্ত্রোপচার সোমবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার অস্ত্রোপচার সোমবার মায়ের কোলে জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসা

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) নিলফামারীর জলঢাকা উপজেলার জোড়া শিশু যদুনাথপুর গ্রামের লাবিবা-লামিসার অস্ত্রোপচার করবেন চিকিৎসকরা। লাবিবা-লামিসা ওই গ্রামের লাল মিয়া-মনুফা আক্তারের দম্পতির সন্তান।

শনিবার (১১ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে তাদের অস্ত্রোপচারের বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন চিকিৎসরা। জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার  অস্ত্রোপচার হবে জোড়া শিশু লাবিবা লামিসার। বর্তমানে তাদের বয়স দুই বছর আট মাস।

এ বিষয়ে শিশু পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ -উল হক কাজল বলেন, এই জোড়া শিশুদের  অস্ত্রোপচারে আমরা খুবই আশাবাদী।  অস্ত্রোপচারে আমরা সফল হব।

অধ্যাপক কাজল বলেন, জোড়া শিশুদের যখন ৯দিন বয়স তখন তারা রংপুর মেডিক্যাল থেকে ঢামেকে আসে। প্রায় দেড় মাস ভর্তি ছিল। এর মধ্যে তাদের পায়ুপথে  অস্ত্রোপচার ও পেট দিয়ে মল ত্যাগের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিন ওদের  অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। গত ২৮ অক্টোবর আবারও তাদেরকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি বলেন, এর আগে জোড়া শিশু তোফা-তহুরার অস্ত্রোপচারর হয়। তাতে আমরা সফল হয়েছি। আশাকরি এ ক্ষেত্রেও আমরা সফল হতে পারব। লাবিবা-লামিসার কিন্তু জোড়াটা অন্য রকম। তাদের পায়ুপথে, মাসিকের রাস্তা এবং মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে। যেটা আলাদা আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ দুটি নারীতে রূপান্তর করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।

ডা. কাজল বলেন, শিশু দুটি বর্তমানে স্ট্রাবল আছে। সবকিছু ভাল থাকলে সোমবার তাদের  অস্ত্রোপচার করব। এতে আমাদের সময় লাগবে প্রায় ৯ থেকে ১০ঘণ্টা।

এই জোড়া শিশুর  অস্ত্রোপচারে পেডিয়াট্রিক সার্জারি ছাড়াও নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, রেডিওলোজি, ইউরোলোজি, অর্থোপেডিকস, সার্জারিও অ্যানেসেলোজির চিকিৎসকরা যুক্ত থাকবেন।

নিওরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, জোড়া শিশুর  অস্ত্রোপচার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা সাবধানে আগোতে চাই। তবে গ্যারান্টি দিয়ে বলা খুব মুশকিল।

ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, এর আগেও আমরা জোড়া শিশুর  অস্ত্রোপচার করেছি। আমরা চিকিৎসকরা টিমসহ কাজ করি। ইনশাল্লাহ এবারেও সমস্যা হবে না। বিজয়ের মাসে আমরাও বিজয়ী হব।

বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে  জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল জলঢাকা উপজেলা সদরের একটি ক্লিনিকে  অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় এই জোড়া লাগা দুই শিশুর। ৯ দিন বয়সে তাদেরকে রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে আসেন। এখানে শিশুদের পায়খানার রাস্তা পেট দিয়ে করে দেন চিকিৎসকরা। প্রায় দেড় মাস থাকার পর ১বছর পর আসতে বলেন চিকিৎসকরা। করোনার কারণে হাসপাতালে আসতে পারেননি। পরে গত ২৮ অক্টোবর সন্তানদের আবার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

মা মনুফা বেগম জানান, শিশু দুটিকে নিয়ে খুব সমস্যায় থাকতে হয়।   একজন হাঁটতে চাইলে, অন্যজন বসতে চায়। একজন খেতে চাইলে অন্যজন কাঁদে। একজন ঘুমাতে চায় তো, অন্যজন চিৎকার করে। ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। এদের সঙ্গে সবসময় থাকতে হয়।

বাবা লাল মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। রাজ মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করি। করোনার সময় সব কাজ বন্ধ ছিল। অনেক কষ্টে দিন গেছে। গ্রামে অনেকের সহায়তা পেয়েছি। তবে ঢামেক হাসপাতালে এসে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। হাসপাতাল থেকে আমাদের সব খরচ বহন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বার্ন ও প্লাস্টিক সাজারি ইউনিটের  প্রধান অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, শিশু সার্জারির অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম ও ঢামেক হাসপাতালের সহাকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা,১১ ডিসেম্বর,২০২১
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।