ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনীহা, ঝুঁকিতে প্রজনন স্বাস্থ্য

মো. জহিরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনীহা, ঝুঁকিতে প্রজনন স্বাস্থ্য

পটুয়াখালী: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে ছেলে-মেয়েরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে।

তেমনি তাদের চিন্তা চেতনায় দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন।

ইউনিসেফের সবশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ৬০ লাখ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। যারা এদেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

বয়ঃসন্ধিকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌনরোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করার জ্ঞান থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীদের অধিকার। এই বয়সে ব্যক্তিগত হাইজিন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পুরুষ-নারী সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশে অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে এ সংক্রান্ত আলোচনা।  

দেশের সংস্কৃতিতে যৌন ও প্রজনন ইস্যুটি এতটাই স্পর্শকাতর যে এ সম্পর্কে আলোচনা করাকে এখনও লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। এতে ঝুঁকিতে নারী ও পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য, অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ু ক্যানসার ও যৌন রোগসহ নানান জটিল ও কঠিন রোগে।

মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে বিষয়টি নিয়ে অধ্যায় থাকলেও এড়িয়ে যান অনেক শিক্ষক। তবে শিক্ষকদের জড়তা কাটিয়ে উঠতে এবং কিশোর কিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নেওয়া হয়েছে সরকারি বেসরকারি নানান উদ্যোগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রজনন স্বাস্থ্য শুধুমাত্র প্রজননতন্ত্রের কার্য ও প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ বা অসুস্থতাকেই বোঝায় না, এটা একজন কিশোর বা তরুণের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণকর এক পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থাকে বোঝায়।

ব্যক্তিগত হাইজিন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের পরিচর্যা যে কোনো বয়সের নারী ও পুরুষের জন্য প্রযোজ্য। নারী-পুরুষ উভয়েরই একটি কল্যাণকর স্বাস্থ্য সেবা। সঠিক সময়, সঠিক সেবা গ্রহণ না করলে নারী ও পুরুষদের পরতে হয় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ু ক্যানসার ও যৌন রোগসহ নানান জটিল ও কঠিন রোগে।

পটুয়াখালীর কয়েকজন কিশোর কিশোরীর সঙ্গে আলাপ করলে বোঝা যায় তারা নিজের জড়তা, সমাজে প্রচলিত গোপনীয়তা ও সেবা গ্রহণ সম্পর্কে না জানাকেই দায়ী করেছেন।

অনেকেই নিজ শিক্ষক, পরিবার ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে নিজের গোপনীয়তা জানাতে লজ্জা বোধ করছে। আবার অনেকেই বয়ঃসন্ধিকালিন পরিবর্তন ও ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নয়। কিছু সংখ্যক জানলেও কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পারছে না।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী ফাতেমা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সরকারের অনেক উদ্যোগ আছে, কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা নিতে আসছে না কেউ। যারা আসে তাদের জন্য কঠোর গোপনীয়তা এবং বন্ধুসুলভ আচরণে সমস্যা শুনে কাউন্সিলিং ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক কিশোর- কিশোরী কর্নার। এই কর্নারগুলো কার্যকর ও গণমূখী করতে কাজ করছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ। কিশোর-কিশোরী ক্লাব ও ইয়েস বাংলাদেশের ওয়াইমুভস প্রকল্পের মাধ্যমে স্কোর কার্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে সেবার একটি সুন্দর পরিসংখ্যান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

পটুয়াখালী কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা আন্দোলনের তরুণ সদস্য তাসনীম বিনতে মনির (সুচি) বলেন, আমাদের নিজেকে গড়ে তোলার সময়টায় নিজের শরীরের প্রতি কঠোর নজর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের লবণাক্ততা ও অন্যান্য সমস্যার জন্য কিশোর কিশোরী ও নারীদের নানান ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এগুলো সম্পর্কে জানা এবং এই ঝুঁকিগুলো প্রতিরোধ করে টিকে থাকতে নিজের থেকে স্বাস্থ্য সচেতন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। নিজে না জানলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কিভাবে সেবা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে অ্যাডভোকেসি করছি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের জড়তা কাটিয়ে উঠতে নানান পদক্ষেপের কথা জানান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মজিবুর রহমান।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. জসীম উদ্দিন বলেন, জেলার সরকারি হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু আছে এবং কর্মীদের এ বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগের কথা জানান জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষা, প্রচার ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।