ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আইসিইউতে বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিনে পতাকা জড়িয়ে সম্মান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
আইসিইউতে বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিনে পতাকা জড়িয়ে সম্মান

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিসিইউ) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়।



বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহবাহী কফিনে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের কোভিড ও নন-কোভিড আইসিসিইউ ইউনিটের প্রধান ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। পরে সেই ছবি ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালের ফেসবুকে শেয়ার করেন। ফেসবুকে তিনি জানান নিজের আবেগ ও অনুভূতির কথা। তুলে ধরেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রয়াত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ব্যক্তি, চিকিৎসক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে লেখা সেই স্ট্যাটাসটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ফেসবুকে তিনি লেখেছেন, ‘আজ রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নন কোভিড আইসিইউতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরন করলেন। আস্তে আস্তে আমাদের দেশের এসব সূর্য সন্তানরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। আমার প্রায়ই মনে হয়, এসব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য আমরা কী যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি? রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ যেহেতু আমার পরিকল্পনায় পরিচালিত হয়। তাই মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ স্বীকারকারী পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি, সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও সম্মান দিতে। সরকারি হাসপাতালের নানা সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয় না। তবু কিছু করার একটা তাগাদা আমার সব সময়ই ছিল।

সে কারণেই, সিদ্ধান্ত নেই আমার পরিচালিত কোভিড ও নন কোভিড আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পর যদি কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তাদেরকে যখন ইউনিট থেকে বের করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে, তখন সেই কফিনের ওপর একটি জাতীয় পতাকা দিয়ে দেবো। সবাই যেনো তাকিয়ে দেখে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার এ প্রিয় স্বদেশের মাটি থেকে শেষ যাত্রা। বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী স্যার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদানের পর উনার সঙ্গে আমার পরিকল্পনার কথা বলতেই অনুমতি দেন।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ২০১১ সালে প্রথম যখন শুরু করি, অর্থের কথা চিন্তা করে একটা নিজস্ব তহবিল গঠন করি। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধোদের হাসপাতাল থেকে শেষ বিদায়ের জাতীয় পতাকা বানানোর কাজে আমার পরামর্শে সেই তহবিল থেকে ব্যয় করার ব্যবস্থা করেন পরিচালক মহোদয়। আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ’

‘মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরপূর্তিতে গত ১৬ ডিসেম্বরে মহান বিজয় দিবস থেকে এটার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হলেও এত দিন কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা কোভিড বা নন কোভিড আইসিইউতে ভর্তি হলেও মৃত্যুবরণ করেননি। আজ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিনের ওপর আমার প্রিয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে আইসিইউ থেকে সম্মান দেওয়া হলো। আসুন, এদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।