ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে প্রতিদিনই প্রায় শতাধিক রোগী ও স্বজনদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। এই লাইনের কারণে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রোববার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে রোগী ও স্বজনদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সারাদিনই সেখানে লাইনে থাকতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, জরুরি বিভাগে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার কক্ষের সামনে একটি থাই গ্লাসের দরজা আছে। কক্ষের বাইরে ও ভেতরে জায়গা থাকলেও দরজাটি সরু। এটা করোনার সময় রোগী ও চিকিৎসকের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য করা হয়েছিল। সেটা এখনও বলবৎ আছে। একজন করে রোগী ওই সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে টিকিট কাউন্টারের মতো কাচ ঘেরা কক্ষে বসেন কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার।
মেডিক্যাল অফিসাররা জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের বক্তব্য শুনে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে রেফার করেন। হাসপাতাল থেকে ক্রয় করা রোগীর টিকিটে মেডিক্যাল অফিসারের রেফার করা সিল-স্বাক্ষর দেখে তারপরে অন্য ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা রোগীকে চিকিৎসা দেন। নিয়ম অনুযায়ী জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারদের রেফার ছাড়া অন্য ওয়ার্ডের ডাক্তাররা রোগীদের দেখেন না।
রোগীদের অতিরিক্ত চাপ ও জরুরি বিভাগের সঙ্গেই ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের দরজা সরু হওয়ায় রোগী ও স্বজনদের জটলা লেগে যায় সেখানে। এতে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
পারিবারিক কলহের কারণে পোকামাকড় মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হালিমা। তার স্বজনরা তাকে মাদারীপুর শিবচর থেকে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন রোববার দুপুরের দিকে।
হালিমার স্বজনরা তাকে নিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখতে পান শতাধিক মানুষের লাইন। সেই লাইনে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তবেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন তারা। রোগীকে নেওয়া হয় নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকরা শুরু করেন হালিমার চিকিৎসা। এই আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে খাকার কারণে জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হালিমা, তার ভাই দাউদ মুন্সি এমন অভিযোগ করেন।
রামপুরার বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, তার মেয়ে তন্বী (১৫) ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। দুপুরের দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী একটি টিকিট কেটে মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক রোগীর লাইন। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক্তারের দেখা না পেয়ে আমার মেয়ে বলে, বাবা আমি ভালো আছি, চলো বাসায় চলে যাই। আর ভালো লাগছে না। তারপরে তাকে বাসায় নিয়ে আসি। সে এখন মোটামুটি ভালো আছে।
আবুল বাশার আক্ষেপ করে বলেন, হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে বাসায় চলে এলাম! তাহলে বোঝেন কতটা বিরক্ত বোধ করেছিলাম দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এটার একটা সমাধান করা দরকার। আগামীকাল জরুরি বিভাগের ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এজেডএস/এমজেএফ